ads

রিবা নির্মূল হবে সিরাতের পন্থায়

"রিবা নির্মূল হতে হবে সীরাতের পন্থায়"! 
.
বলুন তো রিবা, অর্থাৎ সুদ কখন সম্পূর্ণ ভাবে হারাম করা হয়েছে? রিবা সম্পূর্ণ ভাবে হারাম করা হয়েছে বিদায় হজ্জের সময়। এর আগে ধাপে ধাপে রিবার ব্যাপারে আয়াত ও হুকুম নাযিল হলেও এ ব্যাপারে চুড়ান্ত হুকুম আসে এই সময়ে। অর্থাৎ রিবা হারাম করা হয়েছে রাসূলুল্লাহর ﷺ নবুওয়্যাতের জীবনের একেবারে শেষ পর্যায়ে। 
.
যে প্রেক্ষাপটে, যে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতিতে রিবা বা সুদকে বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়েছে সেটার দিকে তাকানো যাক।
.
এটি ছিল এমন এক সময় যখন উম্মাহর মধ্যে একজন নবী ﷺ উপস্থিত ছিলেন, যিনি ﷺ ওয়াহী অনুযায়ী উম্মাহকে চালিত করছিলেন। এ সময় মুসলিমরা শক্তিশালী ছিলেন। শরীয়াহ অনুযায়ী শাসন করা একটি ইসলামি ‘রাষ্ট্র’ বিদ্যমান ছিল। এ রাষ্ট্রের প্রধান ঘোষণা দিয়েছিলেন যদি কোন ব্যক্তি সম্পদ রেখে মারা যায় তবে সে সম্পদ তার পরিবার ও সন্তানসন্ততির। আর যদি কোন ব্যক্তি ঋণ রেখে মারা যায় আর যদি তার পরিবার সে ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয় তবে - সেই ঋণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের, রাষ্ট্রপ্রধানের! 
.
এই হুকুম এসেছিল সাহাবীদের জন্য রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন। যারা ইসলাম শিখেছিলেন খোদ রাসূলুল্লাহর ﷺ কাছ থেকে। এমন সব মানুষ যারা ইমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, বদর, উহুদ, খন্দক আর বাইয়াতুর রিদওয়ানে। তারা ছিলেন এমন সব মানুষ যারা তাদের পরিবার, পরিজন, গোত্র, রাষ্ট্রসহ সমগ্র বিশ্বকে ত্যাগ করেছিলেন, সমগ্র বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, তাওহিদ, তাওয়াক্কুল ও মুসলিম ভাতৃত্বকে আঁকড়ে ধরে।
.
অর্থাৎ শুধু যে ঋণের জামিনদার রাষ্ট্র হচ্ছে তা-ই না বরং, রিবা হারাম হবার হুকুম এমন এক প্রজন্মের উপস্থিতিতে নাযিল হয়েছিল যারা ছিলেন সমগ্র দুনিয়ার ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম। ঋণদাতাও সাহাবী, ঋণগ্রহীতাও সাহাবী! কোন পর্যায়ের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তাবোধ ও আস্থা তাদের মাঝে ছিল, একবার কল্পনা করার চেষ্টা করুন। 
.
ভেবে দেখুন তো, এমন প্রেক্ষাপটে, এমন সমাজে, এমন রাষ্ট্রে আমি বা আপনিও কি ঋণ দেয়ার সময় এতোটা চিন্তা ভাবনা করতাম? অথচ আজকের প্রেক্ষাপট, আজকের পরিস্থিতি, আজকের সমাজ, আজকের মানুষদের কথা চিন্তা করুন। প্রায় প্রতিটি দিক থেকে বিপরীত একটা অবস্থা।
.
শরীয়াহ, ইসলামী শাসন, পারস্পরিক বিশ্বাস, বিশ্বস্ততা, সামাজিক স্থিতিশীলতা, নৈতিকতা – কিছুই নেই। এমন কোন একজন ব্যক্তি নেই যার ব্যাপারে সমস্ত উম্মত একমত। মানুষ আজ ব্যাঙ্কে রাখা টাকার নিশ্চয়তা নিয়েই শংকিত, কাউকে ঋণ দেওয়া তো অনেক দূরের কথা। 
.
কিন্তু এসবের বিবেচনায় – বাস্তবতা, প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি, সমাজ, রাজনীতি ইত্যাদির অজুহাত দিয়ে যদি কেউ বলে – রিবা বা সুদ হারাম হবার হুকুম ঢালাওভাবে আজকে প্রয়োগ করলে মুসলিমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে, কাফিরদের তুলনায় পিছিয়ে পড়বে, ইমান হুমকির মধ্যে পরে যাবে, তাই সরাসরি মদীনার হুকুম হুট করে আজকে প্রয়োগ করা যাবে না –সে কথা কি গ্রহনযোগ্য হবে?
.
ধরুন কেউ বললো –
সাহাবীগণের উপস্থিতিতে কুরআনের আয়াত নাযিল হত। তাঁরা ইমান-আক্বিদা-আমলের শিক্ষা নিতেন রাসূলুল্লাহর ﷺ কাছ থেকে, তাদের আখলাক ছিল বিশুদ্ধ, তাদের আমল ছিল অসামান্য, তাদের ইমান ছিল জীবন্ত - রাদ্বিয়াআল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন। কিন্তু আমরা ঠিকমতো সূরা ফাতিহাই তিলাওয়াত করতে পারি না। আজ আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষের ইমান-আমল-আক্বিদা কোনটাই ঠিক নেই। শিরক, কুফর বিদ’আতে মানুষ ডুবে আছে। তখন ইসলামী শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত ছিল, ইসলামীর রাষ্ট্র ছিল। উপযোগী স্থান এবং শাসন ছিল। আজ কোনটাই নেই। সেই প্রেক্ষাপট, সমাজ, রাষ্ট্র ও মানুষগুলোর সাথে বর্তমানকে মেলানো যায় না।
.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মানবতার মুক্তির দূত ছিলেন, কিন্তু তিনিও তো মক্কার ১৩ বছরে সুদ নির্মূলে কোন অভিযানে নামেননি। সুদ নির্মূল হয়েছে মদীনা রাষ্ট্র শক্তিশালী হবার পর। সেখানে অবস্থান সুদৃঢ় হবার পর। মুসলিমদের যথাযথ তারবিয়াহর পর। এই বিষয়গুলো বুঝতে হবে। বর্তমানে এসব শর্ত বিদ্যমান নেই। তাই এখন হুট করে মদীনার হুকুম আনা হবে ফাসাদ। 
.
যখন মুসলিম উম্মাহ আবার এসব দিকে দিয়ে ঐ অবস্থানে যাবে – যখন ইমান-আমলের উন্নতি হবে, যখন আক্বিদা বিশুদ্ধ হবে, যখন সবার শরীরে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হবে, যখন মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করবে, সবাই ফজরের সালাত মাসজিদে আদায় করবে, যখন নুসরাহ আসবে, যখন ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ সমাজ নির্মিত হবে, যখন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, যখন আবেদরা আরেফ হয়ে যাবে, যখন মদীনার মতো পরিস্থিতি হবে - তখন মদীনার হুকুম আনা যাবে। মদীনার মতো রাষ্ট্র, সামর্থ্য, ব্যক্তি এসব তৈরি করার আগে রিবার ব্যাপারে মদীনার হুকুম টানা যাবে না। 
.
অথবা কেউ যদি বলে -  

মদের ব্যাপারে হুকুম এসেছে ধাপে ধাপে। একবারে হারাম করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত মদীনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর মদ চূড়ান্তভাবে হারাম করা হয়েছে। এখন মদীনার মতো রাষ্ট্র আমাদের নেই। অমন মানুষ, ইলম, তারবিয়াহ নেই, এখন মাক্কী জীবন চলছে... তাই এসব শর্ত পূরণের আগে ও আমাদেরও মদের ব্যাপারে ধাপে ধাপে আগানো উচিৎ। তা না করে, একেবারে মদীনার হুকুম নিয়ে আসা নাজায়েজ হবে।  
.
এ কথাগুলো কি গ্রহণযোগ্য হবে? 
.
না। আমরা বলি না যে ওয়াহী নাযিল শেষ হবার পর, চূড়ান্ত হুকুম আসার পর সেটাকে পেছনে নেয়ার সুযোগ আছে। আমরা বলি না আল্লাহ যা কিয়ামত পর্যন্ত ফরয করেছেন পরিস্থিতির কারনে তা আজ মুবাহ, মাকরুহ কিংবা হারাম হয়ে গেছে অথবা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে। যে শর্ত আল্লাহ আরোপ করেননি, রাসূলুল্লাহ ﷺ আরোপ করেননি, আস সালাফ-আস সালেহিন আরোপ করেননি, ইমামগন যে শর্তারোপ করেন নি – আমরা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো সেখানে নতুন নতুন শর্তারোপ করি না। আমরা নিজেদের খেয়ালখুশি, সুবিধামতো শরীয়াহর অপব্যাখ্যা করি না। আমরা বলি না যে শরীয়াহর আম হুকুম আম ভাবে বদলে গেছে, কিংবা আমভাবে নতুন শর্ত লেগেছে কারন আজকে পরিস্থিতি প্রতিকূল। 
.
কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে ওজর দিতে পারে, কিন্তু আমরা ঢালাওভাবে আমাদের অক্ষমতা, অযোগ্যতা, কাপুরুষতা এবং ওয়াহ্‌নকে জাস্টিফাই করার জন্য আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে নিজে নিজে শর্ত যোগ করি না। আমরা সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)-এর অবস্থানের অনুসরণ করি, বনী ইস্রাইলের না।
.
এটাই সঠিক অবস্থান, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাহর অবস্থান। ইসলামের অবস্থান। রিবার হুকুমের ক্ষেত্রে এবং শরীয়াহর অন্যান্য হুকুমের ক্ষেত্রে যদিও অনেকে তা অপছন্দ করে।

No comments:

ads
Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.