ads

ম্যারিটাল রেইপ বা বৈবাহিক ধর্ষণ

 'ম্যারিটাল রেইপ' বা 'বৈবাহিক ধর্ষণ' টার্মটা নিয়ে নতুন করে মাতামাতি হচ্ছে, এবং এই সুযোগে ইসলামবিদ্বেষী সকল চক্র একজোট হয়ে বলতে চাচ্ছে— ইসলামে এই জিনিসের ব্যাপারে আস্কারা দেওয়া আছে, এবং মুসলিমদের মধ্যেই এই চর্চা ব্যাপক।

ম্যারিটাল রেইপ কি? স্বামীর যদি শারীরিক সম্পর্ক করবার তাড়না জাগে কিন্তু স্ত্রী যদি তাতে রাজি না থাকে, তথাপি স্বামী তার সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক সম্পাদন করে— এটাকে বলা হচ্ছে ম্যারিটাল রেইপ। মানে হলো— শারীরিক সম্পর্ক সম্পাদনের জন্য উভয়ের সম্মতি থাকাটা বাঞ্চনীয়। একজনের সম্মতি আছে, অন্যজনের নেই— এমনটা হবে না।
এখানে তাহলে ইসলামের ভূমিকাটা কি আসলে? কেনোই-বা এই ইস্যুতে ইসলামকে ধরাশায়ী করতে আসলো ইসলাম-বিদ্বেষী মহলটা?
কারণ হলো— একটা হাদিসে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, কোন স্বামী যখন তার স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে, কিন্তু স্ত্রী সেই আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহলে স্বামী যদি কষ্ট নিয়ে রাত পার করে, সকাল হওয়া অবধি ওইদিন ফেরেশতারা ওই স্ত্রীর ওপর অভিশাপ বর্ষণ করে।
এখান থেকে বিরুদ্ধবাদীরা ম্যারিটাল রেইপের একটা সূত্র খুঁজে নিয়েছেন এবং বলছেন— স্ত্রীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইসলাম তাকে স্বামীর বিছানায় যেতে বাধ্য করছে। এটাই তো ম্যারিটাল রেইপ যা নিন্দনীয় অপরাধ তাদের মতে।
এখানে প্রথমত, ইসলামের হুকুম-আহকামে এই কথা স্পষ্টভাবে বলা আছে যে— কোন মুমিন পুরুষ কোনোভাবেই তার স্ত্রীর সাথে অন্যায় করতে পারবে না। স্ত্রীকে অধিকার থেকে এক চুল পরিমাণও বঞ্চিত করতে পারবে না। যদি করে তাহলে সে ইসলামি আইনে অপরাধি বলে গণ্য হবে।
মেয়েদের যে স্বাভাবিক অসুস্থতাগুলো থাকে, যেমন— গর্ভধারণের একটা পর্যায়ে শারীরিক সম্পর্ক করবার মতোন অবস্থায় স্ত্রী থাকে না, ওই অবস্থায় একজন পুরুষ কোনোভাবেই স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে চাইতে পারে না। ইসলাম এটা কোনোভাবেই সমর্থন করে না।
স্ত্রীর ঋতুস্রাবের সময়টাতে একজন স্বামী কোনোভাবেই শারীরিক সম্পর্কের কথা ভাবতে পারবে না। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা একটা গর্হিত কাজ এবং গুনাহ।
স্ত্রী যদি স্বাভাবিক অসুস্থও থাকে, যদি শারীরিক কোন অসুস্থতায় তিনি কাঁবু থাকেন, এমন অবস্থায় কোন বিবেকবান স্বামী কি স্ত্রীর কাছে শারীরিক সম্পর্ক করবার আবদার করতে পারে? ইসলামও এটা সমর্থন করে না, এবং কেউ যদি চায়ও— স্ত্রী এখানে স্পষ্টভাবে এড়িয়ে যাওয়ার অধিকার রাখে।
এর বাইরে, যদি ধরে নেই যে স্ত্রী এমন কোন পর্যায়ে নেই যেখানে থাকলে তিনি শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে পারবেন না, এমন অবস্থায় স্বামী যদি আবদার করে, কিন্তু স্ত্রীর যদি 'মুড' না থাকে, তাহলে কি করার?
এখানে ইসলামের দুইটা সল্যুশানঃ
১. স্ত্রী স্বামীর আবদার রক্ষা করবে, এবং শারীরিক সম্পর্কে যাবে।
২. স্ত্রীর অফ মুডটাকে স্বামী গুরুত্ব দিবে এবং উভয়ে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নেবে। স্ত্রীর মন খারাপের কারণ জেনে নিয়ে স্বামী যথাসম্ভব তাকে উৎফুল্ল করে তোলবার চেষ্টা করবে।
কিন্তু, হাদিসে যে বলা হলো— কোন স্ত্রী স্বামীর ডাকে বিছানায় না গেলে ফেরেশতারা ওই স্ত্রীকে অভিশাপ দেয়, সেটা কোন ক্ষেত্রে?
এটা তখনই, যখন স্ত্রীর কাছে কোন যথাযথ কারণ নেই শারীরিক সম্পর্কে না জড়াবার। তার শারীরিক সমস্যা নেই, মানসিক সমস্যাও নেই, সবকিছু ঠিক থাকবার পরেও যদি সে স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয়— ওই অবস্থার জন্য এটা বলা হয়েছে।
কিন্তু, এর পেছনে কারণ কি?
কারণ হলো— ধরুন কোন স্বামী তার স্ত্রীর কাছে শারীরিক সম্পর্কের আবদার করলো, কিন্তু সবকিছু ঠিক থাকবার পরেও স্ত্রী স্বামীর ডাকে সাড়া দিলো না।
এই অবস্থা স্বামীটাকে দুটো দিকে ঠেলে দিতে পারেঃ
১. হয় সে পরকীয়ায় আসক্ত হতে শুরু করবে, যেহেতু সে স্ত্রীর কাছে তার চাহিদার মূল্য পাচ্ছে না
২. অথবা, সে পর্ণ তথা অশ্লীল ভিডিও দেখে নিজের রিপু চরিতার্থ করবার দিকে ঝুঁকে পড়বে।
এই দুই অবস্থা স্বামীর চরিত্রের অধঃপতনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং এই ধারা চলমান থাকলে আস্তে আস্তে তাদের সম্পর্কটাও হালকা হতে শুরু করবে। একটাপর্যায়ে হয়তো তা আর না-ও টিকতে পারে।
সমস্ত ঘটনার সূত্রপাত শুরু হয়েছে স্ত্রীর একটা 'না' বলা থেকেই।
তাহলে, স্ত্রী এখানে গুনাহগার হবে কেনো তাই তো? ফেরেশতারাই-বা তাকে অভিশাপ দিবে কেনো?
কুরআনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা একটা চমৎকার রূপক দিয়ে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তিনি স্বামীকে স্ত্রীর জন্য 'কাপড়' এবং স্ত্রীকে স্বামীর জন্য 'কাপড়' বলেছেন।
আমাদের গায়ে যখন কাপড় থাকে, তখন ধুলোবালি আমাদের গায়ে লাগতে পারে না। আমাদের শরীর পরিষ্কার থাকে।
তো, যখন একজন স্ত্রী তার স্বামীর জন্য 'কাপড়' হিশেবে বিবেচিত, স্বামীর চরিত্র যাতে ঠিক থাকে, স্বামীর চরিত্রে যাতে কোন ময়লা, কোন আবর্জনা-ধুলোবালি না লাগে, সে-ব্যাপারে কাপড়ের ভূমিকাটুকু তো স্ত্রীকে সমাধা করতেই হবে। যদি স্ত্রী তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এর দায়টুকু তো তাকে নিতে হবেই। এখানেও ব্যাপারটা সেরকম। স্ত্রীর কোন কাজ যদি স্বামীকে অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে, তাহলে এর দায়ভার স্ত্রীর কাঁধেও বর্তাবে বৈকি!
আপনি বলতে পারেন, কারো ইচ্ছা না থাকলে সে শারীরিক সম্পর্কে জড়াবে না। এতে তার কেনো দোষ হবে?
এটা আসলে ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছা দিয়ে দেখলে বোঝা সম্ভব হবে না। এটাকে দেখতে হবে দায়িত্ব-কর্তব্যের চোখ দিয়ে।
কারো ইচ্ছা না হলেই কি সে অফিস কামাই করতে পারে? দায়িত্বে হেলাফেলা করতে পারে? যদি করে তাহলে তাকে জরিমানা গুনতে হয় না?
স্ত্রীর অধিকার আদায়, স্ত্রীকে ভালো রাখাও সেরকমভাবে স্বামীর দায়িত্ব এবং কর্তব্য ইসলামে। স্বামী যদি তাতে হেলাফেলা করে তাহলে সে অবশ্যই গুনাহগার হবে।
আবার, স্বামীর চরিত্র হেফাযতে স্বামীকে সহায়তা করাও স্ত্রীর দায়িত্ব এবং কর্তব্য। সেই দায়িত্বে হেলাফেলা হলে, সেই হেলাফেলা যদি স্বামীকে কোন অন্যায় কাজে ধাবিত করে, তাহলে ওই অপরাধে স্ত্রীকেও গুনাহগার হতে হবে।

No comments:

ads
Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.