ads

কার আনুগত্য করি

 রাসুল (সা)- এর বিখ্যাত হাদিসটা আমরা সবাই জানি-

“স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে সৃষ্টির আনুগত্য নেই।”
খুব ছোট্ট হলেও কথাটির তাৎপর্য অনেক। আর পুরোপুরি মেনে চলাও অনেক কঠিন। আমি এখন পর্যন্ত এমন কোনো মুসলিম পাই নি, যাকে এমন কিছু করতে বলা হয়নি যা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যায়। শতকরা নব্বই ভাগ মুসলিমের দেশ বলে আমরা যতোই বড়াই করি না কেন, কথাটি তেতো হলেও সত্য।
আমাদের জীবনের শুরু থেকে, নিজেদের ঘর থেকেই- এটা শুরু হয়। আমাদের মা-বাবারা সন্তান দাড়ি রাখলে আঁতকে উঠেন, কেটে ফেলতে বলেন। মুখে দাড়ি থাকলে, গায়ে সুন্নাতি লেবাস থাকলে এ দেশে অনেক প্রাইভেট জবের দরজা আপনার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। আমার নিজেরই এ বিষয়ে বেশকিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে।
সরকারি চাকরীতে যে সুখ একদম উপচে পড়ে সে কথাও বলা কঠিন। হ্যাঁ সে চাকরিগুলোতে এখন স্যালারি বেশি। জব সিকিউরিটি বেশি। কিন্তু এগুলোই কি সব? সেখানকার দুর্নীতি, ব্যক্তিপূজার হিড়িক দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় কোনো ব্যক্তিত্ববান মানুষ সে চাকরিগুলো এখন করতে পারবে। স্বায়ত্তশাসিত কোম্পানিগুলোতে হয়তো একটু কষ্ট হলেও পারবে, কিন্তু প্রশাসনিক পদে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এক সরকারি চাকরি করা দ্বীনি ভাইকে চিনি যিনি বিশেষ দিনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাম্বা পূজা না করায় তাকে শোকজ করা হয়েছিলো।
এ পরিস্থিতিতে অনেকে চাইলেও নিজেকে এসব থেকে বের করতে পারে না নানান কারণে। পরিবারের কারণে, সমাজের কারণে, আর্থিক কারণে। শুরু হয় কম্প্রোমাইজ। যে কম্প্রোমাইজের শুরু আছে, শেষ নেই। শুরু হয় দাড়ি কেটে ফেলা, টাখনুর নীচে কাপড় পরা। মিথ্যা বলা, তোষামোদ করা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভুলে যাওয়া। অনেকে আবার এ কম্প্রোমাইজ মেনে নিতে পারে না কিংবা মেনে নিলেও সবার সামনে স্বীকার করতে চায় না। তারা তখন কী করে? তারা নিজের দ্বীনের মাঝে এমন ব্যাখ্যা খোঁজা শুরু করে কিংবা নিজেই এমন ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে যার কোনো ভিত্তি নেই। মজার ব্যাপার, অধিকাংশ সময়ে সে নিজেই এটা জানে। আমার পরিচিত বেশ কিছু দ্বীনি ভাইকে আমি এমনটা করতে দেখেছি।
আবার আরেক গ্রুপ আছে যাদের কাছে আল্লাহ কী বলেছেন, আল্লাহর রাসুল কী বলেছেন- তার কোনো তাৎপর্য নেই। কারণ, তারা ইবাদত করে অন্য কিছুর। অর্থের, ক্ষমতার। সেটার জন্য যা যা করতে হবে তা করতে তারা রাজি আছে।
গুটিকয়েক পাহাড়সম ইমানদার মানুষকে বাদ দিলে আমাদের সমাজের সব মুসলিমদেরকে এই তিন ক্যাটাগরিতে ফেলা যাবে। একজন না চাইলেও বাধ্য হচ্ছে, একজন বাধ্য হচ্ছে কিন্তু সেটাকে জায়েজ বানাচ্ছে, আর আরেকজন জায়েজ-নাজায়েজ এসব নিয়ে একদমই মাথা ঘামাচ্ছে না। এ তিন গ্রুপের কথা এমনি এমনি উল্লেখ করি নি। শুরুতে উল্লেখ করা হাদিসের সাথে এদের সম্পর্ক আছে। এরা সবাই স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে সৃষ্টির আনুগত্য করে। কেউ ইচ্ছে করেই করে, কেউ বা করতে বাধ্য হয়।
যারা করতে বাধ্য হয়, তাদের নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ইচ্ছে করেই যারা করে তাদের নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই স্কলারদের মধ্যে। তারা সবাই বলেছেন, এরা শির্কে আকবরে লিপ্ত। অর্থাৎ, একজন মানুষের পক্ষে সবচেয়ে বড়ো যে গুনাহ করা সম্ভব সেটাই এরা করছে। যে গুনাহ মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
আমরা আল্লাহর কাছে চাই তিনি যেন আমাদেরকে দুনিয়াবি কিছু পদ আর অর্থের জন্য তাঁর সৃষ্টিকে সন্তুষ্ট করতে যেয়ে তাঁকে অসন্তুষ্ট করা থেকে বিরত রাখেন। দূরে রাখেন দুনিয়ার কাউকে এমনভাবে ভক্তি করা, শ্রদ্ধা করা থেকে, যা কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসুলেরই প্রাপ্য। তিনি যেন উলুহিয়াত, রুবুবিয়াত, হুকুমিয়াত- সবকিছুতে তাঁকেই মেনে চলার তৌফিক দান করেন যেভাবে সত্যিই তাঁকে মেনে চলা উচিত।

No comments:

ads
Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.