ads

পাশ্চাত্য সভ্যতা ও হুমকি

আদর্শিকভাবে মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি নাস্তিকতা নয়; বরং পাশ্চাত্য সভ্যতা। নাস্তিকতা এর একটি ছোট্ট অংশ মাত্র। পাশ্চাত্যের মূল সংঘর্ষ স্রষ্টা কিংবা ধর্ম অস্বীকার করা নয়; বরং আল্লাহ ও তার দীনের বিশ্বাস ও বাস্তব ক্ষমতা খর্ব করা। অস্বীকারের বিষয়টা গৌণ; মৌলিক নয়। কেউ করতে পারে আবার নাও করতে পারে। অর্থাৎ পাশ্চাত্য সভ্যতায় নাস্তিকতা তথা তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহকে [১]অস্বীকার করা গৌণ বিষয় মনে করা হয়; আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা একমাত্র স্রষ্টা- এ কথা কেউ স্বীকার করতেও পারে আবার নাও করতে পারে। কিন্তু কেউ যদি বলে আল্লাহই একমাত্র ইবাদত পাওয়ার যোগ্য তখনি দেখা দেবে নানান সমস্যা। তার মানে এখানে মৌলিক বিষয় হলো তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ।[১]

এমনকি আল্লাহর রাসুল আরবের যেই জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছেন, সেই জাতিরও মূল সমস্যা ছিল তাওহিদুল উলুহিয়্যাতে। তাদের মধ্যে আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের মৌলিক স্বীকারোক্তি ছিল; কিন্তু আল্লাহর উলুহিয়্যাতকে তারা একেবারেই অস্বীকার করত।[৩]
নাস্তিকতা কখনোই উম্মতের মাঝে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়নি এবং এর প্রভাবও নির্দিষ্ট পরিসরে সীমাবদ্ধ। কিন্তু পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রভাব অনেক বিস্তৃত। আমাদের কিশোর-সমাজ থেকে শুরু করে ইসলামি ঘরানাগুলো পর্যন্ত পাশ্চাত্য চিন্তাচেতনার ছোবলে আক্রান্ত। বিধ্বস্ত তাদের ঈমানি হালাত। এমনকি নাস্তিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার কিন্তু পাশ্চাত্য সভ্যতায় আকৃষ্ট এমন মুসলিমের সংখ্যাও আমাদের সমাজে কম নয়। একদম নিজের আশেপাশে তাকালেই এর বাস্তবতা দেখা যাবে। নাস্তিক হতে হলে পুরো ধর্মবিশ্বাস ত্যাগ করতে হয়, মুসলিম কমিউনিটি থেকেও কিছুটা দূরে সরে আসতে হয়। তবে পাশ্চাত্য সভ্যতার ইরতিদাদের কবলে পড়লে বাহ্যিকভাবে ধর্মকর্ম ত্যাগ করতে হয় না। মানুষটি যে পাশ্চাত্য মনস্তাত্ত্বিক আগ্রাসনের শিকার এবং প্রকৃতপক্ষে ধর্মকে সে ত্যাগ করেছে- এর অনুভবটাও তার মাঝে আসে না। অধিকন্তু নাস্তিকতা ও অন্যান্য সংশয় তৈরি হওয়ার প্রধান কারণও এই পাশ্চাত্য সভ্যতা। ফলে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম ভাবতে পছন্দ করে বটে; কিন্তু চেতনায় ধারণ করে আছে নাস্তিকতা।
দেখা যাবে, আমাদের আস্তিক নাস্তিক বিতর্কে অধিকাংশ প্রশ্নের উদ্ভব ঘটেছে পশ্চিমা নৈতিকতার মানদণ্ডকে অকাট্য হিসেবে মেনে নেওয়ার কারণে, যার সাথে রয়েছে ইসলামের মৌলিক সংঘর্ষ। বিজ্ঞান কিংবা দর্শনের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন মাত্র কয়েকটি। বিবর্তন আর স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রশ্ন ছাড়া পূর্ণরূপে বিজ্ঞানের সাথে প্রাসঙ্গিক তেমন কার্যকর প্রশ্ন পাওয়া যাবে না। বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক তাত্ত্বিক কথাবার্তা সাধারণ মুসলিমদের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে না। আবার এই বিতর্কে একান্ত ব্যক্তিগত কিছু ফ্যাক্টও রয়েছে। সব মিলিয়ে দেখা যাবে মুসলমানদের মাঝে রিদ্দাহ কিংবা সংশয় সৃষ্টির ক্ষেত্রে নৈতিকতার সাথে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নই বড় প্রভাব ফেলছে। ইসলামের হুদুদ, কিসাস, জিহাদ, ওয়ালা, বারা, নারী অধিকারসহ এমন নৈতিক বিষয়গুলোতেই মুসলিমরা বেশি হোঁচট খাচ্ছে, সংশয়ের শিকার হচ্ছে। কারণ বিজ্ঞানসংক্রান্ত প্রশ্নের চেয়ে এই প্রশ্নগুলো অধিক জীবনঘনিষ্ঠ। এই সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো মানুষের ব্যক্তি-জীবনকে প্রভাবিত করে বেশি।।
১) তাওহিদুর রুবুবিয়্যাত হলো সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা এবং বিশ্বপরিচালনাকারী হিসেবে আল্লাহকে এক মানা। মক্কার মুশরিকরাও এই প্রকার তাওহিদের মৌলিক স্বীকৃতি দিত। তবে তা তাওহিদ হিসাবে শতভাগ বিশুদ্ধ ছিল না।
২)তাওহিদুল উলুহিয়্যাত হলো আল্লাহকে একমাত্র ইবাদতের যোগ্য হিসেবে মেনে নেওয়া। জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাকে বিধানদাতা হিসেবে মানা। আর তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত হলো আল্লাহর যেসব গুণ আমরা কিতাব ও সুন্নাহর মাধ্যমে জানতে পেরেছি কোনোপ্রকার অংশীদারত্ব ছাড়া সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, অন্যকাউকে সেসব গুণের অধিকারী না মানা। এই দুই তাওহিদকেই কাফেররা মানত না। এই তাওহিদ-দুটো তৎকালীন সমাজে প্রতিষ্ঠিত না থাকার কারণে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সেই সমাজকে জাহেলি সমাজ ও কুফুরি সমাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
৩) যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আসমান ও জমিন কে সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্যই বলবে ‘আল্লাহ’। বলুন, তোমরা ভেবে দেখছ কি যদি আল্লাহ আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন তবে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ডাক, তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? বলুন, আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট। ভরসাকারীরা তারই উপর নির্ভর করে। সুরা যুমার, আয়াত ৩৮। আয়াতে সুস্পষ্টতই বলা হয়েছে- মক্কার কাফেররা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে আসমান-জমিনের স্রষ্টা বলে স্বীকার করত। কিন্তু তিনিই যে সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে পরিত্রাণদাতা, তারা তা স্বীকার করত না। বিশ্বাস করত না আল্লাহকে একমাত্র মা'বুদ হিসেবে। ফলে অন্যান্য আয়াতে এই শিরকি বিশ্বাসের কারণে তাদের কাফের বলা হয়েছে।
হিউম্যান বিয়িং বইয়ের ভূমিকা থেকে
Iftekhar Sifat

No comments:

ads
Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.