অর্থ উপার্জন
সাধারণ দুনিয়াবী মানুষের অর্থ উপার্জন আর একজন দ্বীনদার ব্যক্তির অর্থ উপার্জনের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে।
.
যখন একজন নন প্র্যাক্টিসিং লোক উপার্জন করে সেটা তার নিজের ও বড়জোর পরিবারের কাজে আসে কিন্তু একজন প্র্যাক্টিসিং লোক, যে আসলেই প্র্যাক্টিসিং,তার অধিক উপার্জন উম্মাহ ও অন্যান্য দ্বীনদারের জীবনে সহায়ক হয়। এটাই ইসলামী অর্থনীতির একটা চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য। এখানে মাল ১০০% কুক্ষিগত থাকে না।
.
ইসলামী রাষ্ট্রে তো কিছু ক্ষেত্রে শাসক কোষাগারের সম্পদের ঘাটতি থাকলে পূঁজিপতিদের কিছু মাল সিজ করে গণমানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে। কিন্তু যখন শরঈ শাসন থাকবে না তখনও আমভাবে একজন ধনী মুসলিমের সম্পদ আসলে শতভাগ কুক্ষিগত থাকে না।
.
একজন মুসলিমের সম্পদ বাড়লে সে কী করবে?
.
১) আবশ্যিকভাবে সে যাকাত দেবে,ফলে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির লোকেরা অর্থ পাবে।
২) কুরবানি করবে। এতে অর্থনীতির চাকাও সচল থাকবে এর সাথে সংশ্লিষ্ট লোকদের আয় হবে আর দরিদ্ররা মাংসের জোগান পাবে,
৩) নফল সাদকাহ করবে। গরিবদের দেবে,দ্বীনি প্রজেক্টে ব্যয় করবে, উলামা তলাবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করবে, যেই চাইবে তাকে দান করবে।
.
.
এই ব্যবস্থাপনায় তার সম্পদ কুক্ষিগত না থেকে বণ্টিত হবে কেননা এই সম্পদের সে বড়জোর ইজারাদার একক মালিক না। দুনিয়ার সবাই মিলেই এর সমন্বিত মালিক।.
.
এজন্য সূরা বাকারার ২৯ নং আয়াতের তাফসিরে শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান(রাহ.) লিখেছেন,
.
"মালিকের নৈতিক কর্তব্য হল নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত বস্তু অন্যদেরকে দিয়ে দেয়া। কারণ প্রকৃতপক্ষে তাতে অন্যদেরও অধিকার রয়েছে। আর এজন্যই যাকাত দেবার পরও প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ জমা করে রাখা উচিত নয়।..."[১]
.
এজন্যই হযরত আলী, ইবন উমার,আইশাহ,হাসান (রা.) সহ বিভিন্ন সাহাবার উক্তি পাওয়া যায় যে সম্পদে যাকাত ছাড়াও হক্ব আছে। ইমাম আবু উবাইদ(রাহ.) এ প্রসংগে ৩০০ সাহাবার উক্তি আছে বলে উল্লেখ করেছন।.
.
আল্লামা হিফযুর রহমান সিওহারবী(রাহ.) আল মুহাল্লার উদ্ধৃতিতে লিখেছেন-
.
"এ ব্যাপারে সকল সাহাবা ঐকমত্য ঘোষণা করেন যে যদি কোনো লোক ক্ষুধার্ত বিবস্ত্র থাকে কিংবা প্রয়োজনীয় বাসস্থান থেকে বঞ্চিত হয় তবে বিত্তবানদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ দ্বারা তার ব্যবস্থা করা ফরয"[২]
.
এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই ইসলামী অর্থনীতি স্বতন্ত্র। আজকে উম্মাহর যে অবস্থা এজন্য বাজে শাসকরা তো দায়ী বটে হক আদায় না করায় বিত্তবানরাও দায়ী। আবার যারা বিত্ত অর্জন করে উম্মাহর খিদমত করতে পারতো তারা নিজেরা এথেকে দূরে থাকাকেও দায়ী করা যায়।
.
সবশেষে মাওলানা আবুল কালাম আজাদের(রাহ.) কথা দিয়ে শেষ করছি-
.
"(ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়) অবশ্যই অধিক উপার্জনকারী সদস্য থাকবে। কারণ রোযগার ব্যতীত কোনো মানুষই জীবিত থাকতে পারেনা। কিন্তু যে ব্যক্তি যত উপার্জন করবে সে পরিমাণ ব্যয় করতেও সে বাধ্য থাকবে। তাতে করে ব্যক্তির রোযগার যে পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে ব্যষ্টি হিসেবে ব্যষ্টির স্বাচ্ছন্দ্যও সে পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। যোগ্য ব্যক্তিরা অধিক পরিমাণে উপার্জন করবে। কিন্তু তারা শুধু নিজের জন্য উপার্জন করবে না,সে উপার্জন হবে জাতির প্রতিটি লোকের জন্য"[৩]
.
.
[১) ইযাহুল আদিল্লাহ,পৃ: ২৬৮
২) মাওলানা হিফজুর রহমান(রাহ.),ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা,পৃ:৩৮; অনু: মাও. আব্দুল আউয়াল,ইফাবা,মার্চ ২০০০
৩) তরজুমানুল কুর'আন:২/১৩২; সকল উদ্ধৃতি ২ হতে গৃহীত]
.
Manzurul Karim
No comments: