ads

ইন্তিকাইয়্যাহ

 সহজ ভাষায় ইলমুল ফিকহ বলা হয়, যার মাধ্যমে ইসলামী শরীয়ার বিধিবিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করা যায়। এই ফিকহ শাস্ত্রের মুতাওয়ারিস ইলমী ( ট্রাডিশনাল একাডেমিক) একটি পদ্ধতি আছে। উসুলে ফিকহের কিতাবগুলোতে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আছে। এই লেখাতে সেদিকে আমি যাব না।

আধুনিক সময়ে এসে সেকুলার, লিবারেল ও মর্ডানিস্টদের মাঝে একটি ভ্রান্ত ফিকহী পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সেই পদ্ধতিটির নাম হল, ফিকহুল ইন্তিক্বাইয়্যাহ। এর মানে হচ্ছে শরীয়ার নুসুস থেকে কেটে বেছে নিজের প্রবৃত্তি অথবা স্বার্থের জন্য সুবিধাজনক ফিকহ তৈরি করা। ধর্মীয় টেক্সটবুক থেকে কেটে বেছে সেই টেক্সটসমূহকেই গ্রহণ করা যেগুলো ব্যক্তির উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যশীল হয়।
মুসলিম সমাজে এই পদ্ধতির অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে মূলত প্রাচ্যবিদরা। বরং বলা যায়, ইসলামকে বিকৃত করার জন্য তারাও হুবহু এই পদ্ধতিটিই ব্যবহার করেছে। যেমন শাইখ আলি মিয়া নাদভি রহঃ বলেন, প্রাচ্যবিদদের ইসলাম চর্চার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত একটি ভ্রান্তি হল, আগ থেকেই একটা উদ্দেশ্য ও ফলাফল ঠিক করে নেয়া। এরপর এই ফলাফলে পৌঁছার জন্য এবং এটাকে প্রমাণ করার জন্য অপ্রাসঙ্গিক বিভিন্ন তথ্য জমা করা। (অথচ শুদ্ধতা ও সনদের বিচারে সেসব তথ্যের অধিকাংশই দুর্বল। একাডেমিকভাবে যেগুলোর কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।) ফলে এই পদ্ধতিতে এমন কোন দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি নির্মাণ করে যেটার সম্পর্ক কেবল তাদের প্রবৃত্তির সাথে। ইসলামি সমাজের সাথে যার নুন্যতম সম্পর্ক নেই।
সুতরাং ইসলামকে বিকৃত করা এবং পশ্চিমা মতাদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য এটি একটি প্রাচ্যবাদীয় পদ্ধতি। মূলত মুসলিম বিশ্বে সেকুলারিজম, ফেমিনিজম, লিবারেলিজম, হিউম্যানিজম ইত্যাদি মতাদর্শ ঢুকানো এবং সেগুলোর উপর ধর্মীয় লেবাস পড়ানোর পিছনে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মূল ভূমিকা পালন করেছে এই প্রাচ্যবিদরা। এই পদ্ধতিতে মুসলিমদের ভিতরই তারা নিজেদের ভাবশিষ্য তৈরি করে নেয়। আর এই ভাবশিষ্যরা একদিকে মুসলিমদেরকে কুফুরী মতাদর্শসমূহ চর্চাতে লিপ্ত করে আবার সেগুলোর ভিতর একধরণের ধর্মীয় ফ্লেভারও ঢেলে দেয়। যেন সাধারণ মুসলিমরা সহজেই আত্মস্থ হয়।
ধর্মীয় ফ্লেভার ঢালার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আদর্শ পদ্ধতিই হল "ইন্তিকাইয়্যাহ"। দেখা যায়, পাশ্চাত্যের প্রতিটি মতাদর্শকেই ইসলামীক হিসেবে দেখানোর পিছনে সংশ্লিষ্টরা এই পদ্ধতিকেই ব্যবহার করে। প্রথমে তারা একটা উদ্দেশ্য কিংবা ফলাফলকে আগ থেকে উপসংহার হিসেবে মেনে নেয়। তারপর সেটাকে ইসলামী করার জন্য বাহ্যিকভাবে মিল রাখে এমন কিছু খুঁজে বের করে। সবশেষে আগাগোড়া বিবেচনা না করে বাহ্যিক সেই মিলটা দেখিয়ে দাবি করবে, ইসলামই উক্ত ফলাফলের উদ্ভাবক। গনতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি বাতিল মতাদর্শকে যারা ইসলামী বলতে চায়, দেখতে পাবেন তারা হুবহু এই কাজটায় করছে।

No comments:

ads
Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.