ads

অমুসলিমদের উৎসবে শুভেচ্ছা জানানো

 বড়দিন সহ অমুসলিমদের ধর্মীয় দিবস ও অনুষ্ঠানগুলোতে আমরা যেই হারাম কাজটি ব্যাপকভাবে সংগঠিত হতে দেখি, সেটা হল মুসলিমদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা প্রদান এবং কারো কারো ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়। ইতিমধ্যেই আমরা বিভিন্ন সংগঠন ও মুসলিমদের কাছ থেকে এই জঘন্য কাজটি বাস্তবায়িত হতে দেখেছি। অথচ বিষয়টি উলামাদের সম্মিলিত মত অনুযায়ী সুস্পষ্ট হারাম।

উপমহাদেশের অন্যতম দ্বীনি মারকায দারুল উলূম দেওবন্দ। এব্যাপারে দেওবন্দের ইফতা বিভাগে প্রশ্ন করা হলে বলা হয়, বিধর্মীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর সময় এমন কোন কাজ করা যাবে না, যেটা তাদের সেই কর্মের প্রতি সমর্থন ও সেই কাজকে ভাল হিসেবে স্বীকৃতিদানের প্রতি ইঙ্গিত করে। আর এইসব অনুষ্ঠানে মোবারকবাদ জানানো মূলত এরই অন্তর্ভুক্ত। ফলে হিন্দুদের পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মোবারকবাদ কিংবা শুভেচ্ছা জানানো হারাম। এমনকি কখনো কখনো তা ঈমানের জন্যেও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তবে যদি এই কাজ না করার কারণে জান-মালের আশংকা থাকে, তবে কৌশলগত কারণে (অন্তরে ঘৃণা রেখে) বলা যেতে পারে।
জনপ্রিয় আরবী ফতোয়া সাইট ইসলাম কিউয়ে এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বলা হয়,খ্রিস্টমাস (বড়দিন) কিংবা অন্য কোন বিধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে কাফেরদের শুভেচ্ছা জানানো আলেমদের সর্বসম্মত মতানুযায়ী হারাম।
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) তাঁর লিখিত “আহকামু আহলিয যিম্মাহ” গ্রন্থে এ বিধানটি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: “কোন কুফরী আচারানুষ্ঠান উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেমন- তাদের উৎসব ও উপবাস পালন উপলক্ষে বলা যে, ‘তোমাদের উৎসব শুভ হোক’ কিংবা ‘তোমার উৎসব উপভোগ্য হোক’ কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কথা। যদি এ শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করা কুফরীর পর্যায়ে নাও পৌঁছে; তবে এটি হারামের অন্তর্ভুক্ত। এ শুভেচ্ছা ক্রুশকে সেজদা দেয়ার কারণে কাউকে অভিনন্দন জানানোর পর্যায়ভুক্ত। বরং আল্লাহর কাছে এটি আরও বেশি জঘন্য গুনাহ। এটি মদ্যপান, হত্যা ও যিনা ইত্যাদির মত অপরাধের জন্য কাউকে অভিনন্দন জানানোর চেয়ে মারাত্মক। যাদের কাছে ইসলামের যথাযথ মর্যাদা নেই তাদের অনেকে এ গুনাতে লিপ্ত হয়ে পড়ে; অথচ তারা এ গুনাহের কদর্যতা উপলব্ধি করে না। যে ব্যক্তি কোন গুনার কাজ কিংবা বিদআত কিংবা কুফরী কর্মের প্রেক্ষিতে কাউকে অভিনন্দন জানায় সে নিজেকে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির সম্মুখীন করে।”
কাফেরদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো হারাম ও এত জঘন্য গুনাহ (যেমনটি ইবনুল কাইয়্যেম এর ভাষ্যে এসেছে) হওয়ার কারণ হলো- এ শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি স্বীকৃতি ও অন্য ব্যক্তির পালনকৃত কুফরীর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ পায়। যদিও ব্যক্তি নিজে এ কুফরী করতে রাজী না হয়। কিন্তু, কোন মুসলিমের জন্য কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা কিংবা এ উপলক্ষে অন্যকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হারাম।
কেননা আল্লাহ তাআলা কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন: “যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্‌ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও; তবে (জেনে রাখ) তিনি তোমাদের জন্য সেটাই পছন্দ করেন।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৭] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩] অতএব, কুফরী উৎসব উপলক্ষে বিধর্মীদেরকে শুভেচ্ছা জানানো হারাম; তারা সহকর্মী হোক কিংবা অন্য কিছু হোক।
অনুরূপভাবে এ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে কাফেরদের মত অনুষ্ঠান করা, উপহার বিনিময় করা, মিষ্টান্ন বিতরণ করা, খাবার-দাবার আদান-প্রদান করা, ছুটি ভোগ করা ইত্যাদি মুসলমানদের জন্য হারাম। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের-ই দলভুক্ত”। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া তাঁর লিখিত ‘ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম’ গ্রন্থে বলেন: “তাদের কোন উৎসব উপলক্ষে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করলে এ বাতিল কর্মের পক্ষে তারা মানসিক প্রশান্তি পায়। এর মাধ্যমে তারা নানাবিধ সুযোগ গ্রহণ করা ও দুর্বলদেরকে বেইজ্জত করার সম্ভাবনা তৈরী হয়।”
এছাড়াও ইসলামওয়ে, ইসলামওয়েব সহ সকল দ্বীনি মারকাযগুলোর ফতোয়া একই রকম। এই শুভেচ্ছা মূলত কুফুর ও শিরকের প্রতি একজন মুমিনের সহজাত ঘৃণাবোধকে নষ্ট করে দেয়। আজকে আমাদের অধিকাংশ মুসলিমের কাছেই কুফুর ও শিরক স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এগুলোর প্রতি আমাদের সহজাত ঘৃণাবোধ দূর হয়ে গেছে। এটা মূলত কুফুরের বিজয়ী পরিবেশেরই প্রভাব। আল্লাহ আমাদের দ্বীনকে কুফুরের উপর বিজয়ী করে দিন ( রাজনৈতিকভাবে) এবং মুসলিমদেরকে সর্বপ্রকার কুফুর ও শিরকের ছোঁয়া থেকে হেফাজত রাখুন। আমিন।

No comments:

ads
Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.