ads

ইসলামী পুনঃজাগরণ

 দীর্ঘ ঔপনিবেশিক যাঁতাকলে পিষ্ট মুসলিম জাতিকে গত শতাব্দীর শেষোর্ধকে ইসলামী পুনর্জাগরণের শতাব্দী আখ্যা দিয়ে হতাশ ভাগ্যাহতদের বুকে আশার প্রদ্বীপ জালিয়েছিলেন অনেকেই। এটাকে খারাপ বলছি না। আর এরকম আশা পোষণের অন্যতম কারন ছিল তথাকথিত স্বাধিনতা। কিন্তু আশাবাদীদের সিংহভাগই বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে, জাতীয়তাবাদী চেতনায় উৎসারিত কর্মতৎপরতা ইসলামের জন্য কোনো কাজের তো নয়ই বরং ক্ষতিকর। তারা আরও একটা জিনিস বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে, তথাকথিত আজাদীর মাধ্যমে প্রশাসনিক দায়িত্ব ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী সাদা চামড়ার লোকদের থেকে কালো কিংবা বাদামী চামড়ার ইউরোপীয়দের মগজধারীদের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র। শাসন ও কর্তৃত্বের বাগডোর উপনিবেশিক যুগে যেমন ইউরোপীয়দের হাতে ছিল এখনও তাই-ই আছে। সুতরাং, ইসলামী পুনর্জাগরণের আশা পরবর্তীতে হতাশার কারন হয়েছে। আশা করতে বা স্বপ্ন দেখতে নিষেধ নেই। কিন্তু, কার্যকর আশা ও স্বপ্নের ভিত্তি যে সকল উপাদানের উপর ভর করে নির্মাণ করা যায় সেগুলোর উপস্থিতি বা পর্যাপ্ত মজুদ এজাতির কখনই ছিল না, এখনও নেই।

তারপরও আমরা স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করি। আজও দেখছি। স্বপ্ন দেখা ভালো, আশা ছাড়া তো সমুখে এগোনো যায় না। আশা করতে দোষ নেই। আশা করতেই পারি - চলতি শতাব্দী ইসলামী পুনর্জাগরণের শতাব্দী। কিন্তু পুনর্জাগরণের অন্তরায় হিসাবে এমন একটা অতি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকে অন্তরায় মনে করা হচ্ছে যারা বিভ্রান্ত এবং সমাজতন্ত্রের গায় ইসলামী রঙের একটা হালকা প্রলেপ দিয়ে সমাজের খুবই সীমিত একটা অংশে ফিতনা ছড়াচ্ছে। বৈশ্বিক বিবেচনায় সরিষা দানার মতো ক্ষুদ্র আঞ্চলিকতার ফিতনাকে কোনো কোনো বন্ধু চলতি শতাব্দীর ইসলামী পুনর্জারণের পথে মহা বাঁধা হিসাবে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
এ আশঙ্কার সাথে একমত না হওয়ার কারন হলো, বিশ্বায়নের এযুগে ইসলামী পুনর্জারণের ছবি বৈশ্বিক ক্যানভাসেই আঁকতে হবে। সমগ্র মানব জাতির জন্য মনোনীত একটা দ্বীন একটা আদর্শের জাগরণ আঞ্চলিকায় সীমাবদ্ধ করা যায় না, এবং অঞ্চল বিশেষে জাগরণের লক্ষণ প্রকাশ পেলেও তাকে সামগ্রিক অর্থে জাগরণ বলা যায় কিনা চিন্তা করা উচিত। একই ভাবে যে আদর্শের লক্ষ্য - বৈশ্বিক বিপ্লব, সেই আদর্শের জাগরণের পথে কতিপয় বিভ্রান্ত ব্যক্তির ক্ষুদ্র পরিসরের নিছক আঞ্চলিক একটা সমস্যা বাধা হতে পারে না।
মূলত, যে কোন আদর্শের পুনঃজাগরণের পথে অন্তরায়গুলো সঠিকভাবে চিহৃিত করতে পারা আদর্শের পুনঃজাগরণের স্বপ্ন - আশার প্রাথমিক ধাপগুলোর অন্যতম। আমরা চলতি শতাব্দীকে ইসলামি পুনঃজাগরনের শতাব্দী বলছি ঠিকই কিন্তু বাধা নির্ণয়ে ভুল করছি। আর পুনঃজাগরণের উপায় - উপকরণের ব্যাপারেও সঠিক ধারণা রাখি না। আদৌ সেসকল উপায় - উপকরণ মজুদ আছে কিনা - এব্যাপারে সচেতনা ছাড়া পুনঃজাগরণের স্বপ্ন দিবাস্বপ্নের শামিল হতে পারে।
ইসলাম সাধারণ কোন মানব রচিত আদর্শ নয়। এটা একাধারে ধর্ম ও আদর্শ। এর ভিত্তিমূল বিশ্বাসের গভীরতায় প্রোথিত, মস্তিষ্কের পরিচ্ছন্ন চিন্তায় ও আক্বিদায় এর বিস্তার। সুতরাং, আক্বিদার বিশুদ্ধতা এবং চিন্তার পুনঃগঠন ও পুনঃবিন্যাস ছাড়া ইসলামী পুনঃজাগরণ সম্ভব নয়।
এ শতাব্দীকে ইসলামী পুনঃজাগরণের শতাব্দী - এ স্বপ্ন দেখতে আমার আপত্তি নেই, বরং আমিও উৎসাহের সাথে এ স্বপ্ন দেখতে প্রস্তুত যদি আমরা ইসলামী পুনঃজাগরণের পথে এ শতাব্দীর বড় বাধাগুলো চিহৃিত করতে সক্ষম হই। কতিপয় উন্মাদ ব্যক্তির আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত সমাজতান্ত্রিক স্বপ্ন নয়, এ শতাব্দীতে ইসলামী পুনঃজাগরণের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো, ইউরোপীয় মানবতাবাদ ও উদারতাবাদ। ঈমান বিধ্বংসী এ ফিৎনা পরিকল্পিতভাবে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সমাজে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে মুসলিমরা দলে দলে ইরজাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে যা জ্ঞাতসারে ও অজ্ঞাতে মুসলিমকে মুরতাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। এমনকি অনেক সচেতন ও অনুশীলনী মুসলিম এ মায়াবী ফিৎনায় পতিত হচ্ছে। জামানার এই ভয়ংকর ফিৎনাকে ফিৎনা হিসাবে চিহ্নিত করতে পারলে এবং এর বিরুদ্ধে ব্যাপক বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ গড়তে পারলেই আমি বলব, চলতি শতাব্দী ইসলামী পুনঃজাগরণের শতাব্দী।

No comments:

ads
Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.