ads

নষ্ট বীজে নষ্ট ফসল সমাচার

 মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে বিশেষ করে এক সময় ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনাধীন এলাকার মুসলিমদের মধ্যে বেদ্বীন ও বিজাতীয় কৃষ্টি-কালচারের অনুপ্রবেশে এবং ইউরোপীয় বস্তুবাদী দর্শন তথা সেক্যুলার ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ও অর্থনেতিক মতবাদ প্রতিষ্ঠায় এক শ্রেণীর তথাকথিত মুসলিম নামধারী পণ্ডিত বা স্কলারদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। মূলত এ শ্রেণীর মুসলিম পণ্ডিতরাই হলেন ইউরোপীয়দের মানসপুত্র, যাঁঁদেরকে ইংরেজ আর ফরাসীরা নিজ হাতে সযত্নে গড়ে তুলেছিল। এঁরাই হলো ঔপনিবেশিক শাসকদের নষ্ট বীজের নষ্ট ফসল।

উপমহাদেশের মওলানা আবুল কালাম আজাদ, স্যার সাইয়্যেদ আহমেদ, আমীর আলী নষ্ট ফসলের অন্যতম নাম। এ তালিকায় আরও আছেন মিশরের ড. ত্বোহা হোসাইন, শেখ মোহাম্মদ আবদুহু, কাশিম আমিন প্রমূখ। আর সরাসরি ঔপনিবেশের শাসনাধীন না হলেও তুরস্কের মুসলিম স্কলার এক জিয়া গোকলপের ভ্রান্ত চিন্তাধারা জন্ম দেয় ইসলাম বিহীন নব্য তুরস্কের।
এ সকল মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও চিন্তানায়কগণ ছিলেন ধর্মহীন ইউরোপীয় বস্তুবাদী দর্শন দ্বারা প্রভাবিত। ইউরোপের অভূতপূর্ব জাগতিক বা বস্তুগত উন্নয়নে তাঁরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। এ সকল ব্যক্তিদের তালিম তরবিয়্যাত দিয়ে মুসলিমদের মাঝে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁরা আক্ষরিক অর্থে ইউরোপীয় বিজ্ঞানী, দার্শনিকদের গুরু ও প্রভূ মেনে নেন। ইউরোপীয়রাও নব্য শিষ্যদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে কার্পণ্য করে না। ইউরোপীয়দের দেওয়া বিভিন্ন উপাধি তাদের ব্যক্তিত্বের গূরুত্ব বাড়িয়ে দেয়, ফলে মুসলিম জন সাধারণের মধ্যে তাঁদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি সৃষ্টি হয়।
মুসলিম জাতির মধ্যে নব্য সৃষ্ট নিকৃষ্ট এ শ্রেণীর মন মগজ সবটাই ইউরোপের আয়ত্তে চলে যায়। তাঁরা যারপর নাই হীনমণ্যতার শিকার হয়ে পড়েন। বিজ্ঞান ও দর্শনের প্রয়োগে ইউরোপের বস্তুগত জাগতিক উন্নয়নে তাঁদের চোখ ধাঁধিয়ে যায়। মুসলিম সুলভ বোধ বুদ্ধি বিগড়ে তাঁদের ভাগ্য ইউরোপের সাথে জুড়ে যায়। এরপর তাঁরা সরাসরি মুসলিমদের আহ্বান করেন ইউরোপীয় কৃষ্টি-কালচার, দর্শন গ্রহণ করার জন্য। মজার ব্যাপার হলো, তাঁদের এই বিপদজনক চিন্তাধারার সপক্ষে ইসলামকে ব্যবহার করতেন। বলা বাহুল্য, কুর'আন-হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যাই ছিল তাঁদের পূঁজি। নতজানু মানসিকতার এই সকল ব্যক্তিরা মুসলিমদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন যে, যাবতীয় দুরাবস্থা ও অবমাননাকর জীবন থেকে মুক্তি পেতে এবং উন্নয়নের মহাসড়কের গর্বিত যাত্রী হতে হলে ইউরোপকে অনুসরণ ও অনুকরণ ভিন্ন গত্যন্তর নেই। তাঁদের এই প্রচারণা বেশ জোরে শোরে চলতে থাকে। মানুষেরা জাগতিক উন্নয়নের মোহে শয়তানী আহ্বানে সাড়া দিতে বিলম্ব করে না। এ ভাবে বিশাল একদল নষ্ট-ভ্রষ্ট মানুষ পয়দা হয় মুসলিম জাতির গর্ভ হতে। যারা নামে মুসলিম, গায়ের রঙে এশীয় কিংবা আফ্রিকীয় কিন্তু মন-মগজে ইউরোপীয়।
জামানার নমরুদ, খিলাফত ধ্বংসকারী, ইসলাম নির্বাসিত আধুনিক তুরস্কের রুপকার কামাল আতাতুর্ক ছিলেন ইউরোপীয় প্রডাক্ট তুর্কি পণ্ডিত জিয়া গোকপলের ভ্রষ্ট চিন্তাধারার প্রত্যক্ষ মানস সন্তান। নব্য ফিরাউন মিশরের জামাল আব্দুন নাসের ছিলেন ড. ত্বোহা হোসাইনের ভাব শিষ্য। উপমহাদেশের প্রায় প্রত্যেক জাতীয়তাবাদী ও সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের ওপর মওলানা আবুল কালাম আজাদ ও স্যার সাইয়্যেদ আহমেদের চিন্তাধারার প্রভাব লক্ষনীয়।
ঔপনিবেশিক যুগে ইউরোপীয়দের গড়া নামধারী মুসলিম চিন্তানায়কগণ ও তাঁদের দ্বারা প্রভাবিত বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতারা যে শয়তান কর্তৃক চালিত ও ধোঁকায় পতিত তা তো এখন প্রমাণিত। এঁরা ধোঁকায় নিমজ্জিত হয়ে ছিলেন যে, ইউরোপীয় কৃষ্টি-কালচার ও দর্শন গ্রহন করলেই ইউরোপের মতো জাগতিক তথা বস্তুগত উন্নতি করতে সক্ষম হবে। দেখায় যাচ্ছে, তা হয়নি। হবে কি? এত বড় বড় পণ্ডিত ও প্রতিভাবানদের মগজে এই সহজ কথাটা যে ঢুকেনি - ইউরোপের জাগতিক উন্নতির মূলে ছিল তাদের ঔপনিবেশিক শোষন-শাসন, দস্যুবৃত্তি, লুণ্ঠন ও ধোঁকাবাজি। যা আজও কায়েম রয়েছে অন্য নামে, নতুন মোড়কে। আমাদের পণ্ডিতগণ উন্নয়নের আসল রহস্য না বুঝে জাগতিক সুখ ও সমৃদ্ধির মোহে জাতিকে উপহার দিয়েছেন বিজাতীয় কৃষ্টি-কালচার ও দর্শন যা আজ প্রায় গোটা জাতিকে পথভ্রষ্ট করে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
---------------------------------------------------------------
★ জালেম শাসকের চেয়ে নষ্ট ভ্রষ্ট স্কলারই বেশি ক্ষতিকর। জালেম শাসকের পক্ষে ভ্রষ্ট পণ্ডিত সৃষ্টি করা সম্ভব না হলেও পণ্ডিতরা কিন্তু শাসকের মানসিকতা গঠন করে। আর ভ্রষ্ট পণ্ডিত ও জালেম শাসকের সন্মিলিত ভাবে জুলুম আর জাহালতের সয়লাব বইয়ে দেয়। জালেম শাসকরা শুধু জাগতিক ক্ষতি করতে সক্ষম হয় কিন্তু নষ্ট ভ্রষ্ট পণ্ডিতদের কারণে ঈমান-আক্বিদা বিপর্যস্ত হয়। এ কারণে এ শ্রেণীর পণ্ডিত বা স্কলারদেরকে সবচেয়ে বিপদজনক বলি, তাদের সমালোচনা করি এবং এদের থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলি।
আজও এ শ্রেণীর আলেম বা স্কলারদের অস্তিত্ব আছে। ইসলাম প্রিয় যুব মুসলিমদের মধ্যে তাদের প্রবল প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এ শ্রেণী ভূক্ত স্কলারদের নিয়ে পূর্বেও লিখেছি, সামনেও লেখার পরিকল্পনা আছে, ইনশাল্লাহ্!

No comments:

ads
Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.