ঈদের নামায ঘরে (একাকী কিংবা জামাতে) আদায় করার দলিলের পর্যালোচনা
আমাদের কিছু কিছু ভাই মাঝেমধ্যেই এমন সব মাসআলা পেশ করে যার সাথে এই অঞ্চলের মানুষের পূর্ব পরিচিতি নেই। কী উদ্দেশ্যে তারা এসব করেন আমাদের জানা নেই; কিন্তু তাদের এসব কর্মকান্ডে সমাজে যে ফেৎনা তৈরি হচ্ছে এবং মানুষের মধ্যে সংশয় ও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে সেটা তো সুস্পষ্ট।
এ ধরনেরই একটি বিষয় হচ্ছে ঘরে ঈদের নামায আদায় করা। ইদানিং কোন কোন ভাই জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন যে ঘরে একাকী কিংবা জামাতে সাথে ঈদের নামায পড়া যাবে। এসংক্রান্ত একটি লিফলেট আমার নজরে এসেছে। লিফলেটের শিরোনাম হচ্ছে, ঈদের সালাত ঘরে আদায় করার নিয়ম। সেখানে লেখা আছে- ‘পরিবারের সকলে মিলে একসাথে জামাতে সালাত আদায় করুন ও ঈদের সালাত বাসায় আদায় করলে এতে কোন খুৎবা নেই’’-বুখারি 987
প্রশ্ন হলো, বাস্তবেই কি ঈদের নামায ঘরে পড়ার কোন সুযোগ ও বৈধতা শরিয়তে আছে? জি এবিষয়টি নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
এক.
প্রথমত এই বিষয়টি আমাদের জানা থাকা দরকার যে ঈদের নামায ওয়াজিব। কারণ:
ক.
কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছন-
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন।’-সূরা কাউসার, আয়াত : ২
খ.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পুরো জীবদ্দশায় একটি বারের জন্যও ঈদের নামায ত্যাগ করেন নি। এজন্যই উলামায়ে আহনাফের মতে ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব।
দুই.
জুমুআর মতো ঈদের নামাযের জন্যও দু’ধরণের শর্ত রয়েছে: ক. ওয়াজিব হওয়ার শর্ত। খ. আদায় সঠিক হওয়ার শর্ত। ঈদের নামায আদায় সঠিক হওয়ার শর্তগুলোর মধ্যে একটি শর্ত হচ্ছে জামাতের সাথে আদায় করা। আরকটি শর্ত হচ্ছে শহর কিংবা শহরতলী হওয়া। কেননা হযরত আলী রা. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে-
لَا جُمُعَةَ وَلَا تَشْرِيقَ إِلَّا فِي مِصْرٍ جَامِعٍ
‘‘শুধু শহরেই জুমুআ ও ঈদের নামায বৈধ’’
-মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: 4/46 [হাদিসটির সনদ সহিহ]
قال الحافظ في الفتح: 3/287: ومن ذلك حديث على: "لا جمعة ولا تشريق إلا في مصر جامع" أخرجه أبو عبيد بإسناد صحيح إليه موقوفا ومعناه لا صلاة جمعة ولا صلاة عيد
মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: 4/46 এ এসংক্রান্ত আরো অনেক আসার রয়েছ।
ইমাম জাসসাস রহ. ‘শরহু মুখতাসুরুত তাহাবি’ গ্রন্থে (2/161) বলেন-‘যখন একথা প্রমাণিত যে ঈদের নামায শহরের সাথে সম্পৃক্ত -যেমনটি আমরা বর্ণনা করেছি-সুতরাং এটি জুমুআর মতো জামাত এবং ইমামের সাথেই সম্পৃক্ত হবে। তাছাড়া ঈদের নামায জামাত ও ঈমাম ছাড়া বর্ণিতই হয় নি তাই যেভাবে তা নবীজী থেকে প্রমাণিত শুধু সেভাবেই পড়লেই বৈধ হবে। কেননা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘ صلوا كما رأيتموني أصلي ‘তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখ, সেভাবেই নামায পড়।’ আর তিনি তো এভাবেই (জামাতের সাথে) পড়েছেন)
তিন.
জুমুআ এবং ঈদের নামাজ পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাযের মত নয়; বরং এদু’টির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে। এগুলো দু’একজনে মিলে ঘরে কিংবা কোথাও জড়ো হয়ে আদায় করার মতো বিষয় নয়। বিশেষত: ঈদের নামাযের বিষয়টি একেবারেই ব্যতিক্রম। এটি মুসলমানদের বিশেষ উৎসব এবং ইসলামের বিশেষ একটি শিআর। এখানে বড় জমায়েত হওয়া এবং বেশি সংখ্যক মানুষ একসাথে নামায পড়া বিশষভাবে উদ্দেশ্য। একারণেই তো ঈদগাহে নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর একারণেই ইসলামের প্রথম যুগে যখন মুসলমানরা সংখ্যায় কম ছিল, তখন মহিলাদেরকে পর্যন্ত ঈদগাহে নিয়ে যাওয়ার বৈধতা দেয়া হয়েছিল। এসম্পর্কে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে হযরত উম্মে আতিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করেছেন, আমরা যেন মহিলাদেরকে ঈদুল ফিত্বর ও ঈদুল আযহাতে বের করি: পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনী সবাইকে। তবে ঋতুবতী মহিলারা সলাত থেকে বিরত থাকবে। বাকী পুণ্যের কাজে ও মুসলিমদের দু‘আয় শারীক হবে। -সহিহ বুখারি, হাদিস 351; সহিহ মুসলিম 891
এখন যদিও মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়ার ঐ প্রয়োজনীয়তা নেই, তাছাড়া ঐ সময়ের মতো নিরাপত্তাও এখন নেই, তাই যদিও তাদের জন্য বর্তমানে ঈদগাহে যাওয়া সমীচীন নয় (অার এবিষয়টি আমার এখনকার আলোচনার বিষয়ও নয়) কিন্তু এই হাদিস থেকে এবিষয়টি তো সুস্পষ্ট যে ঈদের নামাযে বড় জামাত হওয়া এবং একসাথে অনেক সংখ্যক লোক নামায পড়া এটি শরিয়তের বিশেষ উদ্দেশ্য। এবার আপনিই বলুন ঈদের নামায ঘরে আদায় করলে কি সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে? তাহলে কীভাবে ঘরে ঈদের নামায পড়ার চিন্তা মাথায় অাসে।
চার.
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় একটি বারের জন্যও ঈদের নামায ঘরে একাকী কিংবা জামাতের সাথে পড়েছেন এমর্মে একটি হাদিসও পাওয়া যায় নি। তেমনিভাবে আল্লাহর রাসুলের একজন সাহাবি কিংবা কোন তাবিয়ি ঘরে ঈদের নামায পড়েছেন কিংবা ঘরে আদায় বৈধ হওয়ার ফতোওয়া দিয়েছেন এমর্মে সহিহ সনদে একটি আছারও পাওয়া যায় নি। বুঝ গেল ঘরে ঈদের নামায আদায়ের সুযোগ শরিয়তে নেই।
পাঁচ.
আমাদের অনেক ভাই যারা ঈদের নামাজ ঘরে পড়ার কথা বলেছেন তারা সহিহ বুখারির উদ্ধৃতিতে হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত নিন্মোক্ত আছরটি পেশ করছেন।
وأمر أنس بن مالك مولاهم ابن أبي عتبة بالزاوية فجمع أهله وبنيه وصلى كصلاة أهل المصر وتكبيرهم .
‘হযরত আনাস রা. তার গোলাম ইবনে আবি উতবাকে ‘যাবিয়া’তে (বাসরা থেকে দু’ ফরসখ দূরত্বে অবস্থিত স্থান যেখানে হযরত আনাসের বাড়ি এবং জমিজামা ছিলা) নির্দেশ দিলেন। তিনি তাঁর (আনাসের) পরিবারের লোকদেরকে এবং সন্তানাদিকে একত্রিত করলেন এবং এবং যেভাবে শহরে নামায হয় সেভাবে তাকবিরসহ নামায আদায় করলেন।’
রেওয়ায়েতটি ‘মওসুলান’ মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: 4/236; আস সুনানুল কুবরা, বাইহাকি: 3/350 এ বর্ণিত হয়েছে।
এই রেওয়ায়েত কয়েকটি কথা আছে:
ক.
এটি সহিহ বুখারীর ‘মুসনাদ’ কোন হাদিস নয়; কিন্তু আমাদের ভাইয়েরা যেভাবে এটাকে উপস্থাপন করছেন তা দেখে যে কেউ মনে করবে যে এটি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত সহিহ বুখারির অন্যান্য মুসনাদ রেওয়ায়েতের মতো একটি রেওয়ায়েত। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, এটি সহিহ বুখারীর ‘তারজামাতুল বাব’ তথা শিরোনামের একটি অংশ, যা তিনি তা‘লিকান উদ্ধৃত করেছেন। আর বিশেষজ্ঞদের জানা কথা যে বুখারীর মুসনাদ হাদিস আর ‘তালিকান’ রেওয়ায়েত এক মানের নয়।
খ.
এই রেওয়ায়েতের সনদও সহিহ নয়। কারণ রেওয়ায়েতটি ‘মওসুলান’ মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: 4/236 এবং আস সুনানুল কুবরা, বাইহাকি: 3/350 এ বর্ণিত হয়েছে। বাইহাকির সনদ সম্পর্কে ইবনুত তারকুমানি রহ. তাঁর আল জাওহারুন নাকিতে (3/350) বলেন-
في سنده نعيم بن حماد قال النسائي ليس بثقة وقال الدارقطني كثير الوهم وقال أبو الفتح الازدي وابن عدي قالوا كان يضع الحديث في تقوية السنة وحكايات مزورة في ثلب ابي حنيفة كلها كذب
সনদের আরেকজন রাবি ‘হুশাইম’ তিনি যদিও নির্ভরযোগ্য; তথাপি তিনি যে ‘তাদিলিস’ করতেন এটা তো প্রসিদ্ধ। উপরন্তু তিনি এই রেওয়ায়েতটি ‘আন’ দিয়ে বর্ণ করেছেন। সুতরাং তাঁর এর এই রেওয়ায়েরে উপর নির্ভর করা যায় না।
শায় নাসিরুদ্দিন আলবানি রহ. তাঁর ইরওয়াউল গালিলে : (3/120) বাইহাকির সনদ সম্পর্কে বলেন, এর সনদ দুর্বল।
এতো গেল বাইহাকির রেওয়ায়েত সম্পর্কে আলোচনা। মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবার রেওয়ায়েতে একজন রাবি হচ্ছেন, ইউনুস ইবনে উবাইদ ইবনে দিনার। তিনি ‘মুদাল্লিস’ আবার তিনি যার কাছ থেকে রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করেছেন তার নামও সুস্পষ্ট বলেন নি; অস্পষ্ট রেখেছন। তার বক্তব্য হচ্ছে حدثني بعض آل انس ان انسا كان ربما جمع اهله وحشمه يوم العيد فصلى بهم عبد الله بن أبي عتبة ركعتين
'আমাকে আনাসের পরিবারের একজন বলেছেন, যে হযরত আনাস কখনো তাঁর পরিবারের লোক এবং গোলামদেরকে ঈদের দিনে একত্রিত করতেন অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে উতবা দু'রাকাত নামায পড়াতেন'
গ.
তৃতীয়ত: এটি স্বাভাবিক অবস্থার কোনো আমল নয়। বরং কখনো যদি তিনি ওযরবশত সময়মতো ঈদের নামায পড়তে পারতেন না তখন এভাবে জামাতের সাথে কাযা আদায় করতেন। দেখুন সুনানে বাইহাকির বর্ণনায় রেওয়ায়েতটির শব্দ এভাবে এসেছে-
كان انس إذا فاتته صلاة العيد مع الامام جمع اهله فصلى بهم مثل صلاة الامام في العيد
‘হযরত আনাস রা. ঈদের নামায কাযা হয়ে গেলে তাঁর পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈমাম যেভাবে ঈদের নামায পড়ান, সেভাবেই ঈদের নামায আদায় করতেন।’ বুঝা গেল তিনি কোন কারণে ইমামের সাথে পড়তে না পারলে এভাবে কাযা আদায় করতেন।
এখানে আরেকটি সম্ভাবনা আছে। আনাস রা. এর আমলকে কাযা না বলে দ্বিতীয় জামাত বলা যেতে পারে। হযরত আনাস রা. এর যেহেতু অসংখ্য সন্তানাদি ও দাস-দাসী ছিল তাই যদি কখনো ইমামের সাথে ঈদের নামায আদায় করতে পারতেন না তখন তাদেরকে নিয়ে ঈদের নামাযের দ্বিতীয় জামাত আদায় করতেন। সহিহ বুখারির তা‘লিকান রেওয়ায়েত এবং বাইহাকির আরেকটি তা‘লিক থেকে এরকমই বুঝে আসে। দেখুন বুখারির রেওয়ায়েতের লফজ-
وأمر أنس بن مالك مولاهم ابن أبي عتبة بالزاوية فجمع أهله وبنيه وصلى كصلاة أهل المصر وتكبيرهم .
এবার দেখুন বাইহাকির লফজ-
ويذكر عن انس بن مالك انه كان إذا كان بمنزله بالزاوية فلم يشهد العيد بالبصرة جمع مواليه وولده ثم يامر مولاه عبد الله بن ابي عتبة فيصلي بهم كصلاة اهل المصر ركعتين ويكبر بهم كتكبيرهم
‘হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি যখন ‘যাবিয়া’তে তাঁর বাড়িতে থাকতেন এবং বাসরায় ঈদের জামাতে শরিক হতে পারতেন না তাঁর গোলাম এবং সন্তানাদিকে একত্রিত করে তার গোলাম আব্দুলল্লাহ ইবনে আবি উতবাকে নির্দেশ দিতেন নামায পড়ানোর জন্য। তখন তিনি শহরে যেভাবে নামায হয় সেভাবে তাকবিরসহ দু’রাকাত নামায পড়াতেন।’
ঘ.
হযরত আনাস রা. রেওয়ায়েতটি যদি সহিহও ধরে নেওয়া হয় তবুও কথা থেকে যায় যে এভাবে ঈদের নামায আদায় করা, কাযা হোক কিংবা দ্বিতীয় জামাত হোক, এটি তাঁর বিশেষ একটি আমল। যখন তিনি কোন কারণে মূল জামাতে শরিক হতে পারতেন না তখন এভাবে কাযা/দ্বিতীয় জামাত পড়তেন। তাঁর পরিবারে শতেক খানেক সন্তানাদি এবং দাস দাসী ছিল। তাদেরকে নিয়ে এভাবে কাযা/ঈদের দ্বিতীয় জামাত আদায় করেছেন। কিন্তু তার এই আমল থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ঘরে দু’চারজন মিলে ঈদের নামায আদায়ের বৈধতা মিলে না। সুতরাং ঘরে ঈদের নামাযের স্বপক্ষে এই রেওয়ায়েতটি পেশ করার কোন যৌক্তিকতা নেই।
ঙ.
একদিকে হযরত আনাস রা. এর এই অামলটি সব সময়ের কোন অামল নয় বরং কোন এক সময় ঈদের নামায ইমামের সাথে পড়তে না পেরে এমনটি করেছিলেন রেওয়ায়েতটির বাক্যের দিকে তাকালে বিষয়টি সুস্পষ্ট বুঝা যায়; অাবার তিনি যে এমটা করেছেন সেটাও সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত নয়। কারণ এই রেওয়ায়েতের সনদ দুর্বল। অপরদিকে এটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত রেওয়ায়েতেরও বিপরিত। এসম্পর্কে শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানি রহ. তাঁর ইরওয়াউল গালিলে : 3/120 বলেন-
وقد روي عن ابن مسعود خلاف ذلك
'হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে এর বিপরিত বর্ণিত হয়েছে।'
ইবনে মাসউদের যে রেওয়ায়েটি মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: 4/235 এ এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
من فاته العيد مع الإمام فليصل أربعا
‘যে ঈদের নামায পড়তে পারে নি সে যেন চার রাকাত নামায পড়ে’
قال الحافظ في الفتح: 3/315: قال بن مسعود من فاته العيد مع الإمام فليصل أربعا أخرجه سعيد بن منصور بإسناد صحيح
ইবনে মাসউদ রা. যে চার রাকাত পড়ার কথা বলেছেন এটি কিন্তু ঈদের নামাযের কাযা হিসেবে নয়; বরং নফল হিসেবে। কারণ যদি কাযা হতো তাহলে তো দু’রাকাতের কথা বলা হতো। একারণেই উলামায়ে আহনাফ ঈদের নামায না পড়তে পারলে চাশতের মতো চার রাকাত নফল নামায পড়া মুস্তাহাব বলেন। বিস্তারিত দেখুন, রাদ্দুল মুহতার: 2/175-176
এটির কোন বাধ্যবাধকতাও নেই। চাইলে দু'রাকাত কিংবা চার ররাকাত নফল হিসেবে পড়তে পাড়তে পারে অাবার না চাইলে নাও পড়তে পারে। দেখুন, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আশশাইবানী রহ. বলেন,
ﻗﻠﺖ: ﺃﺭﺃﻳﺖ اﻟﺮﺟﻞ ﻳﻔﻮﺗﻪ اﻟﻌﻴﺪ ﻫﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﺃﻥ ﻳﺼﻠﻲ ﺷﻴﺌﺎ؟ ﻗﺎﻝ: ﺇﻥ ﺷﺎء ﻓﻌﻞ، ﻭﺇﻥ ﺷﺎء ﻟﻢ ﻳﻔﻌﻞ. ﻗﻠﺖ: ﻓﻜﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺇﻥ ﺃﺭاﺩ ﺃﻥ ﻳﺼﻠﻲ؟ ﻗﺎﻝ : ﺇﻥ ﺷﺎء ﺃﺭﺑﻊ ﺭﻛﻌﺎﺕ، وإﻥ ﺷﺎء ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ.
(কিতাবুল আসল ১/৩২০)
সাত.
এখন প্রশ্ন হলো, বিশেষ পরিস্থিতিতে যেমন বর্তমানে করোনার এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ঘরে ঈদের নামায পড়ার সুযোগ আছে কি? তো এসম্পর্কে প্রথম কথা হলো, আমাদের দেশে যেহেতু সরকারিভাবে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, পাঁচ ওয়াক্ত জামাতে মসজিদে জামাতের সাথে নামায হচ্ছে সুতরাং আমাদের দেশে ঘরে ঈদের নামায আদায়ের কোন সুযোগ নেই।
বাকি যেসকল দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেখানে ঘরে পড়া যাবে কি না? এসম্পর্কে কথা হলো, জুমুআর নামায আদায় সঠিক হওয়ার যে শর্ত ঈদের নামাযা সঠিক হওয়ার জন্যও একই শর্ত। কিছুদিন আগে যখন সরকারিভাবে মসজিদে জুমুআ আদায়ের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল তখন জুমুআর নামাজ মসজিদ ছাড়া ঘরে কিংবা অন্য কোন স্থানে একত্র হয়ে পড়া যাবে কিনা এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতানৈক্য আমরা লক্ষ্য করেছি। শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানি দা. বা. এর সর্বশেষ মত ছিল, জুমুআ একটি শেয়ার, এটি অন্যান্য নামাযের মত নয় সুতরাং তা ঘরে আদায় করা যাবে না। ঈদের নামাযের ক্ষেত্রেও একই কথাই। তথাপি কেউ যদি অন্যান্য মাযহাবের অনুসরণে ঘরে আদায় করে নেন তাহলে যেহেতু মাসআলাটি ‘মুজতাহাদ ফিহি’ তাই বিশেষ পরিস্থিতিতে এভাবে আদায় করলে আশা করা যায় আদায় হয়ে যাবে। এমনটিই বলেছেন শায়খুই ইসলাম তাকি উসমানি দা. বা.।
আট.
কারোনাকালের বিশেষ পরিস্থিতিকে যেসকল দেশে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যেখানি যদি ঘরে ঈদের নামাজ পড়া বৈধও হয় তবুও তা জামাতের সাথে আদায় করতে হবে। একাকী আদায় করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ একাকী ঈদের নামায পড়ার কোন সুযোগ শরিয়তে নেই।
আল্লাহ তাআলা সবাইকে বিষয়টি বুঝার তওফিক দান করুন, আমিন।
No comments: