ads

প্রচলিত মিডিয়া ডিঙ্গিয়ে

 কুষ্টিয়ার এসপি-র বক্তব্য নিয়ে শান্তনু কায়সার নামে একজন ইউটিউবার/কন্টেন্ট মেইকারের ভিডিও দেখলাম। এ স্ট্যাটাস যখন লিখছি ভিডিওতে তখন পর্যন্ত ভিডিওতে রিঅ্যাকশান ৪১ হাজার। শেয়ার ১৬ হাজার। এ ভিডিওর কিছু দিকের ব্যাপারে আমার আপত্তি আছে। চেতনাবাদ আর সেক্যুলার রাষ্ট্রের মিথ-মেইকিং এর ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ অনেক দিক তিনি স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে মেনে নিয়েছেন বলে মনে হল। তবে এই আপত্তিগুলো সত্ত্বেও তার এই কাজ প্রশংসার দাবি রাখে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে, সীমিত সামর্থ্য নিয়েও মূলধারার হলুদ মিডিয়ার প্রপাগ্যান্ডা কীভাবে মোকাবেলা করা যায় শান্তনু কায়সারের এই ভিডিও এবং অন্যান্য ভিডিওগুলোর সাফল্য তার খুব ভালো উদাহরণ। প্রচারমাধ্যমের ব্যবহারের ব্যাপারে বিকল্প একটা পন্থাও এখান থেকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

.
তথ্যের প্রবাহ, সামাজিক-রাজনৈতিক কমেন্টারি -এগুলো একসময় সীমাবদ্ধ ছিল পত্রিকার পাতা আর টিভি টকশো-তে। এসব প্ল্যাটফর্মের দারোয়ানরা বরাবরই বাংলাদেশের ইসলামবিরোধী সেক্যুলার এস্টাবলিশমেন্ট। সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য বক্তব্যের সংজ্ঞা আর সীমা নিয়ন্ত্রন করার মাধ্যমে এরা সমাজের মানুষের চিন্তার ওপর একধরণের একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করেছিল। দশকের পর দশক ধরে বিভিন্নভাবে ইসলামে এরা প্রশ্নবিদ্ধ করে আসছে।
.
তাছাড়া এসব প্ল্যাটফর্মে গিয়ে মুসলিমদের নিজেদের অবস্থান এবং দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা সবসময়ই একটা লুসিং স্ট্র্যাটিজি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে খেলতে গেছেন। মাঠও তাদের, বলও তাদের, রেফারিও তাদের, মাঠের চারপাশে জড়ো হওয়া লোকজনও তাদের - এমন অবস্থায় কতোটা ফেয়ার গেইম আশা করা যায়? বাংলাদেশের মূলধারার মিডিয়াতে গিয়ে নিজেদের অবস্থান তো সঠিকভাবে তুলে ধরা যায়-ই না, বরং এসব প্ল্যাটফর্মে যাবার মাধ্যমে তাদের কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা অনিচ্ছাসত্ত্বেও তৈরি করে দেয়া হয়। অথচ তাদের প্ল্যাটফর্মে যাওয়া ছাড়াও যে ন্যারেটিভ কিংবা বয়ানকে প্রভাবিত করা যায়, তা শান্তনু কায়সারদের মতো কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের ভিডিওগুলোর সাফল্য থেকে প্রমাণিত।
.
আমাদের অ্যাপ্রোচের আরেকটা দুর্বলতা হল সব কিছুর জন্য বিশাল আয়োজন করার অভ্যাস। শাহবাগী মিডিয়ার প্রপাগ্যান্ডার মোকাবেলা করার আলোচনাগুলো বেশিরভাগ সময় আবর্তিত হয় দৈনিক পত্রিকা, কিংবা টিভি চ্যানেল তৈরি করাকে ঘিরে। এধরণের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল, অভিজ্ঞতা, বাজেট, কো-অর্ডিনেশানসহ বিভিন্ন বিষয়ের কথা চিন্তা করতে গিয়েই আমরা হয়রান হয়ে যাই। বিশাল পরিকল্পনা, বিশাল বাজেট, বিশাল কমিটি, অসংখ্য পদ ও পদবি – চিন্তা আটকে থাকে এসবের মধ্যেই। বছরের পর বছর আফসোস আর চিন্তাভাবনা চলতে থাকে, কিন্তু কোন অগ্রগতি হয় না।
.
অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে আরো সহজে, কম খরচে, এবং কম লোক দিয়ে কাজ করে ভালো রকমের প্রভাব ফেলা সম্ভব। শান্তনু কায়সারের মতো ইউটিউবারদের টিম কতো বড়? এমন একটা চ্যানেল চালানোর জন্য কয় জন মানুষ দরকার? উপস্থাপক, এডিটর, প্রতিবেদন বা স্ক্রিপ্ট লেখক, অনুসন্ধানী রিপোর্টার – সব মিলিয়ে মোট ৫ জন? ৭ জন? ১০ জন? এর চেয়ে তেমন বেশি হবার কথা না। একটা পত্রিকা কিংবা টিভি চ্যানেল দাড় করানো, প্রতিযোগিতা করে জনপ্রিয়তা অর্জন করা, এটা করতে গিয়ে শরীয়াহর সাথে আপোস না করা – অত্যন্ত কঠিন। অসম্ভবের কাছাকাছি। কিন্তু এধরণের জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করা কিন্তু খুব দুঃসাধ্য কিছু না। বরং আমার মনে হয় ধৈর্য্য ধরে এক-দেড় বছর এমন প্রজেক্টের পেছনে সময় দিলে আল্লাহ্‌ চাইলে ভালো রকমের ফলাফল পাওয়া সম্ভব, যদি নিচের কয়েকটি বিষয় মেনে চলা যায় -
.
- সাধারণ মানুষের পালস বোঝার চেষ্টা করা এবং কথা মাথায় রেখে বিষয়বস্তু বাছাই করা
.
- সাধারণ মানুষের ভাষায়, তাদের কাছে বোধগম্য এমনভাবে বক্তব্য তুলে ধরা
.
- বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে কাজ করা
.
- আলোচনা, সমালোচনা, বিশ্লেষণ ইত্যাদিতে দ্বীন ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া।
.
- নির্দিষ্ট কোন মাসলাক বা বলয়ের ওপর ফোকাস না করা। নিজস্ব একো চেইম্বারের ভেতরে আটকে না থেকে বৃহত্তর সমাজকে এনগেইজ করার চেষ্টা করা
.
- ওয়াজ মেন্টালিটি (হম্বিতম্বি, হুমকিধামকি, অতিরঞ্জন) এড়িয়ে চলা
.
- যেসব বিষয়ে শাহবাগী সেক্যুলার এস্টাবলিশমেন্টের সাথে ইসলামের সাংঘর্ষিকতা সবচেয়ে বেশি পরিষ্কার, এবং যেগুলো তরুণদের কাছে প্রাসঙ্গিক সেগুলোকে প্রাধান্য দেয়া
.
- দুর্বল যুক্তির বদলে সবচেয়ে সবল যুক্তিকে প্রাধান্য দেয়া। কোন বিষয়কে ভুল প্রমাণের জন্য ১০টা যুক্তি দেখানোর আবশ্যক না। ভালো যুক্তি ১-২টা হলেও কাজ হয়।
.
এ ধরণের কিছু সহজ মূলনীতি মেনে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে গেলে চেতনাবাদী মিথ্যাচারের কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি করা অসম্ভব কিছু না। এধরণের কাজের জন্য বিশাল পরিমাণ বাজেট কিংবা লোকবলও লাগবে না। টেন মিনিট স্কুল, পূজা উদ্বোধনসহ বিভিন্ন সাম্প্রতিক ইস্যুতে আসা প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে বিশাল একটা জনগোষ্ঠী ইসলামের অবস্থান জানতে চায়। ইসলামের অবস্থান থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুনতে চায়। ইসলামের ন্যারেটিভ শুনতে চায়। কিন্তু এ জায়গাটাতে কাজ হচ্ছে না। চিন্তাভাবনা এবং কাজে রিসোর্সফুল এবং ডায়ানামিক হওয়া জরুরী। অবাস্তব বিশাল, বিশাল পরিকল্পনার বদলে যতোটুকু সাধ্য এবং সামর্থ্য আছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে কাজ করা যায়, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার। আর সাফল্য শুধু আল্লাহরই পক্ষ থেকে।

No comments:

ads
Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.