ads

গণমাধ্যম, ধর্ম ও বিজ্ঞান

আমাদের সমাজে জরুরী ভিত্তিতে গণমাধ্যম, ধর্ম ও বিজ্ঞানের প্রাথমিক লিটারেসির সচেতনতা দরকার। প্রাথমিক লিটারেসি বলতে বুঝাচ্ছি, ফ্যাক্টচেক ও ফ্যাক্ট-অপিনিয়নের মধ্যে পার্থক্য করার সক্ষমতা। এখন সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যম ও আল্লামা গুগলের যুগ। সবার হাতে হাতে মোবাইল; ফলে প্রত্যেকেই ফেসবুক, ইউটিউব ও গুগলের মাধ্যমে প্রচুর তথ্য ভোগ করছি, প্রভাবিত হচ্ছি ও সিদ্ধান্ত তৈরি করছি। এভাবে  গণমাধ্যম, ধর্ম ও বিজ্ঞানের যুক্তিতে অনেকেই অনেক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিচ্ছে, আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করছে ভাইরাল সংস্কৃতি, পেইড ও পশ্চিমা এলগরিদম ভিত্তিক কন্টেন্ট।

ধরা যাক, আপনি একজন শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি বা ইমাম, অথবা ধরতে পারেন, আপনি একজন বাবা বা মা। আপনি একজন অথরিটি। প্রতিদিন আপনি যেসব তথ্য ভোগ করছেন, সেগুলোই আসলে আপনি প্রয়োগ করতে  চাইবেন। তাতে ভ্রান্তি থাকলে আপনার অধীনস্তরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে, ভুলতথ্য জানবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে আমি আমাদের এলাকার সরকারি কমিউনিটি হাসপাতালে গেলাম, দেখলাম, সেখানের অধিকাংশ কার্যক্রম জন্মনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রিক। অথচ জনসংখ্যা ও জননিয়ন্ত্রণ প্রকল্পটা মোটাদাগে অপবিজ্ঞান, বর্ণবাদী ও ধর্মবিদ্বেষী কার্যক্রম। উপস্থিত মহিলাদের দেখে মনে হল, তারা কেউ শিক্ষিত নন। বিজ্ঞানের প্রাথমিক লিটারেসি থাকলে তারা এসব নিয়ে প্রশ্ন করতে পারতেন। 

আপনি যদি গুগলে সার্চ দেন, প্রতিদিন কয়ঘণ্টা ঘুমাতে হবে, তাতে এক বিলিয়নের বেশী উত্তর পাবেন। অনেক উত্তরেই আট ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ পাবেন, অথচ সবার জন্য সববয়সে আট ঘণ্টা ঘুম আদর্শ নয়। ফলে এভাবে অনেক বিজ্ঞানভিত্তিক অপবিশ্বাস ও মিথের তৈরি হচ্ছে। আমার ধারণা অনলাইনে ধর্মীয় মিথের চেয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক মিথের সংখ্যা অনেক বেশী। মানুষ একসময় মনে করতো, তথ্যের ঘাটতিতে হুমকির মুখে মানবসভ্যতা। তবে ডিজিটাল যুগে এসে প্রমাণিত হচ্ছে, তথ্যের আসলে ঘাটতি নেই, ঘাটতি ভেদ-বুদ্ধি সম্পন্ন ও উদ্যোগী মানুষের। 

কিছুদিন আগে হিউমেন মিল্ক ব্যাংক নিয়ে বিতর্ক হল। সেকুলার ও আধা মুসলিমরা বলা শুরু করলেন, হজুররা সবকিছুতেই প্রতিক্রিয়া দেখান, বিজ্ঞানকে 'নাকচ' করেন, পারলে বিকল্প এনে দেন। মজার বিষয় হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা সমাজে হিউমেন জেনোম এডিটিং নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্মতিহীন এডিটের কারণে চীন একজন বিজ্ঞানীকে তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম প্রয়োগের ক্ষেত্রে এর নৈতিক ও গণসম্মতি দরকার। বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে অবশ্যই ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মতামত ও অংশগ্রহণ জরুরী ছিল, যেমন ফতোয়া বিভাগগুলোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও সমাজতাত্ত্বিকদের অংশগ্রহণ জরুরী, তাতে বৃহত্তর-কার্যকর সম্মতি তৈরি হবে।
 
শাখাগত তর্ক না করে গোঁড়ায় হাত দিন।

No comments:

ads
Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.