চিকিৎসা ও ধর্ম
এক মসজিদে জুম্মা পড়তে ঢুকলাম। খতীব সাহেব বলছেন, টীকা বা চিকিৎসায় কিছুই হবে না। একমাত্র মুহাম্মদী আদর্শ গ্রহণ করলেই আরোগ্য সম্ভব। বারবার তিনি চিকিৎসাবিদ্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছিলেন। এভাবে ধর্মকে চিকিৎসা চেষ্টার মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেওয়াকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ মনে করি। অবশ্যই চিকিৎসা চেষ্টাও ইসলামি শিক্ষার অংশ।
বিজ্ঞানবাদ ( বিজ্ঞানই করবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ ও সমাধান) যেমন সমস্যাজনক, একইভাবে ধর্মীয় জড়বাদও ( শুধু দোয়াতেই সব সমাধান) সমস্যাজনক। মূলত এটি জাবরিয়া-মুরজিয়াদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আমাদের কয়েকজন শিক্ষকের কথা মনে পড়ে। মহল্লা থেকে কেউ দোয়া নিতে আসলে তারা বলতেন, চিকিৎসকের কাছে নিয়েছেন তো? এটা বলে দোয়া করে দিতেন।
ইসলামি ইতিহাসে চিকিৎসা শাখায় ছিল ধর্মের বিশেষ অংশগ্রহণ। মাদরাসায় পড়ানো হত বিশেষায়িত চিকিৎসা বিজ্ঞান, মসজিদে প্রদান করা হত প্রাথমিক চিকিৎসা, ধর্মীয় দান ও ওয়াকফে চলতো হাসপাতাল। কেননা মানুষের প্রাণ রক্ষা ও কষ্ট লাঘব করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। তাই চিকিৎসা কখনোই ধর্ম থেকে আলাদা ছিলো না। দারুল উলুম দেওবন্দেও ইসলামি চিকিৎসা ধারা পুনর্জীবিত করার প্রয়াস চালানো হয়েছিল।
যদিও ইউরোপিয়ান আধিপত্য ও অনুদানের অভাবে দেওবন্দি আলেমগণ চিকিৎসা প্রকল্পে সফল হননি। তবে আমরা অবশ্যই সেই প্রয়াসের কথা ভুলে যাইনি। মাদরাসা এখন বিশেষায়িত ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞান শেখানো অসম্ভব ও অপ্রয়োজনীয়। তবে ধর্মীয় প্রচেষ্টায়, বাংলাদেশের চিকিৎসা মান ও সেবা উন্নয়নের ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিতে আমাদের বিশেষ দায় আছে, সেটা যাতে আমরা না ভুলে যাই।
No comments: