সভ্যতা বনাম ইসলাম
খ্রিস্টধর্ম রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে শক্তিহীন হওয়ার ফলে তাদের থিওলজিও গুরুত্বহীন হয়ে গেছে। বাইবেলে কি বলেছে সেটা আর স্ট্যান্ডার্ড নয়। রাষ্ট্র, সমাজ, আইনের উপর খ্রিস্টধর্মের সামান্যতম প্রভাবও নেই।
তবে থিওলজি এবং আল্লাহর সুপ্রিম অথরিটিকে ছুড়ে ফেলে দেয়ার পরও খ্রিস্টানধর্ম টিকে আছে কালচার হিসেবে। সেক্যুলার সভ্যতা থিওলজিকে অস্বীকার করলেও কালচারকে করেনি, কারণ থিওলজি ছাড়া কালচার কোনো থ্রেট না। বরং, কালচারকে নিজেদের মতো করে গ্রহণ করা, শেপ করার ফলে সেটা একসময় নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। তাই, খ্রিস্টানরা ছাড়াও দুনিয়ার বহু মানুষ ক্রিসমাস উদযাপন করে। ধর্মহীন থেকে শুরু করে ভিন্নধর্মাবলম্বী লোকেরা, এমনকি জাপানের মতো ট্র্যাডিশনালি আইসোলেটেড অঞ্চলের মানুষও উৎসাহের সাথে ক্রিসমাস উদযাপন করে। কারণ, ক্রিসমাস এখন যতোটা না খ্রিস্টানদের উৎসব, তারচেয়ে বেশি কালচারাল। খ্রিস্টানধর্ম প্রভাবপ্রতিপত্তি হারানোর পর টিকে আছে Ceremonial কিছু আচারের উপর। খ্রিস্টধর্মের থিওলজিকে Disown করলেও কালচারকে সেক্যুলার সভ্যতা Own করে নিয়েছে। তাই, ক্রিসমাস এখন সবার উৎসব। পাশাপাশি, সাহিত্য ও পপ-কালচার দ্বারা প্রমোটেড হওয়ার ফলে ক্রিসমাস উদযাপন একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। (টিভির যুগ থেকে ইন্টারনেট যুগ, পশ্চিমের কালচারই ডমিনেন্ট)
একইভাবে, হ্যালোউইন কেল্টীক সভ্যতার রুট থেকে আসলেও এটা এখন মোটাদাগে সবার উৎসব। থ্যাংকসগিভিং শুধু আমেরিকার না, সারাবিশ্বের। গত কয়েকবছরে ভারতের দিওয়ালী এবং হোলি উৎসব খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে মিডিয়া ও বলিউডের কল্যাণে।
সেক্যুলার ন্যারেটিভে সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু নাই, কোনো ধর্মের ব্যাখ্যাই ব্যক্তিস্বাধীনতার উপরে নয়। তাই, খ্রিস্টধর্মের ক্রিসমাস, মুশরিকদের হোলি কিংবা কেল্টীক মিথের হ্যালোউইন পালন তাদের কাছে গুনাহ নয়, স্রেফ কালচার।
.
এজন্যই ইসলামকে তাওহীদের বদলে শুধু কালচার দ্বারা ডিফাইন করাটা প্রব্লেমেটিক। আল্লাহর একত্ববাদ ও সুপ্রিম অথরিটি অস্বীকারকারীরা আমাদের কালচারাল ফেস্টিভিটিকে ক্রিসমাসের মতো গ্রহণ করে নিলে কোনো ফায়দা নেই। এতে ইসলামের প্রভাবপ্রতিপত্তি বাড়বে না। বরং, খ্রিস্টধর্মের মতো ইসলামও Ceremonial রিলিজিয়নে পরিণত হবে। এইটা মুসলিমদের জন্যও একরকম ধোঁকা যারা কয়েকটা কালচার রিভাইভ করতে পারাকে ইসলামের রিভাইভাল মনে করে।
.
আমাদের সাহাবীরা যখন যুদ্ধে যেতেন, তারা প্রতিপক্ষকে হয় ইসলাম গ্রহণ নয়তো যিজিয়া প্রদান করে মুসলিমদের অধীনে আসার প্রস্তাব দিতেন। তাদের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান ছিলো তাওহীদ। মুসলিমরা যে সভ্যতা ও কালচার ডেভেলপ করেছিলো, সেটার মূলেও ছিলো ইসলাম। তাই মুসলিম শাসণের অধীনে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলো তাদের অনেকেই ইসলামকে বিভিন্নভাবে শক্তিশালী করেছে। কারণ, তারা কেবল ইসলামী সভ্যতাকেই গ্রহণ করেনি, তারা তাওহীদকে বুকে ধারণ করেছিলো। তারিক বিন যিয়াদ, সালাহউদ্দীন আইয়্যুবী, রুকনউদ্দীন বাইবার্স, মুহাম্মদ আল ফাতিহদের কেউই আরব নন। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম বুখারীর মতো অনেক প্রখ্যাত আলিম অনারব ছিলেন। কিন্তু, জাতিগত পরিচয়ের চেয়ে তাদের মুসলিম পরিচয়টাই তাদের স্মরণীয় করেছে।
ইসলামিক কালচার প্রমোট করা দোষের না, ইসলামের স্বর্ণযুগের উদাহরণ টানাও নয়। কিন্তু, তাওহীদের দাওয়াত ছাড়া এসব অ্যাপ্রোচ খুব একটা বেনেফিশিয়াল নয়। আমাদের সম্মানিত করেছে ইসলাম। মুসলিমদের গ্র্যান্ড আর্কিটেকচার, স্বর্ণযুগের প্রাচুর্যের মাঝে সম্মান খুঁজতে যাওয়া একরকম বস্তুবাদী অ্যাপ্রোচ। স্বর্ণযুগের রাজধানী বাগদাদ ও কর্ডোভার স্বর্ণযুগ চিরস্থায়ী ছিলো না, মোঙ্গলরা বাগদাদকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিলো, পশ্চিমা সভ্যতার বিজয়ও চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু, আমাদের রব চিরস্থায়ী, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তাওহীদ আমাদের গর্ব। তাওহীদ ছাড়া নিজেদের কালচার/স্বর্ণযুগের বয়ান প্রচার করাটাও একপ্রকার হীনমন্যতা।
উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “নিশ্চিতভাবে আমরা ছিলাম মর্যাদাহীন জাতি এবং আল্লাহ ইসলামের দ্বারা আমাদের সম্মানিত করেছেন। আমরা যদি আল্লাহর দেয়া সম্মানের বদলে অন্যকিছুর দ্বারা মর্যাদা খুঁজি, আল্লাহ আমাদের অপদস্থ করবেন।”
Azher Mahmud
No comments: