ads

দ্বীনি দাওয়াত ও শয়তানের ধোকা

 ইউনিভার্সিটিতে থাকতে আমরা সোবহানবাগ কলোনীতে থাকতাম। একদিন সাইকেল চালিয়ে বাসায় ফিরছি - আমাদের বিল্ডিং এর ঢোকার রাস্তায় দেখি কয়েকটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারছে।

মানুষ বায়োলজিকালি একটা অ্যানিম্যাল অর্থাৎ জৈবিকভাবে পশু।
পশুর বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটার নাম কৌর্টশিপ বিহ্যাভিওয়র। অর্থাৎ ছেলেরা চাইবে মেয়েরা যেন তার দিকে তাকায়। মেয়েরা চাইবে ছেলেরা তাদের দিকে তাকাক।
মেয়েরা দৃষ্টি কাড়ার টুল হিসেবে প্রসাধনী ব্যবহার করে। আর ছেলেরা কখনও চুলের ভেতর দিয়ে হাত সামনে থেকে পেছনে চালায়। কখনও শিষ বাজায়, কখনও মারামারি করে ব্যাটাগিরি দেখায়।
তো আমি একজন বায়োলজিকাল প্রোগ্রামড মানুষ এবং ছেলে হিসেবে খুব ভাব নিয়ে সাইকেলের স্পিড না কমিয়ে বাঁকা হয়ে মোড় নিলাম। মটো রেসিং স্টাইলে।
সমস্যা হচ্ছে ওই জায়গায় প্রচুর শ্যাওলা থাকায় সাইকেলের চাকা গ্রিপ করল না। আমি বাঁকা হয়ে পিছলা খেয়ে ছ্যাঁচড়ে গেলাম।
কেডস ছিড়ে গেল।
প্যান্ট ছিড়ে গেল।
পাও ছিলে গিয়েছিল। কিন্তু পা ছিলে যাওয়াটা ক্ষণস্থায়ী সমস্যা।
কিন্তু ছেড়া প্যান্ট আর ছেড়া জুতার কষ্টটা বেশি লেগেছিল। আমাদের সময় ছেড়া প্যান্ট পড়ে ঘোরাটাকে গরিবী ভাবা হতো, আধুনিকতা না।
বাস্তব জীবন হিন্দি সিনেমা না। কেউ আমাকে তুলতে এগিয়ে এলো না। আহত পা এবং ততোধিক আহত ইগো নিয়ে বাসায় গেলাম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
অনেক বছর হয়ে গেছে। এখন আমি সাইকেল চালাই না, একটা স্কুটি চালাই - পারফরমেন্স স্কুটি টাইপের - বেশ ভাব আছে।
এখন আর ব্যাচেলর নই। তিন ছেলের বাবা - কয়েকগাছি দাড়িঁও গেছে পেকে।
কিন্তু তাও রাস্তায় মাঝে মাঝে আপাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে বায়োলজিকাল প্রোগ্রাম বলে একটু স্পিড তুলে শাঁ করে পাশ দিয়ে চলে যেতে কিংবা আঁকা বাঁকা হয়ে একটু কিরিঞ্চি করে অন্য বাইকগুলোকে ওভারটেক করতে।
সচেতনভাবে আমি জানি এখন আর বিপরীত লিঙ্গকে মুগ্ধ করা বয়স নেই। দরকারও নেই।
এটাও জানি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَا تَرَكْتُ بَعْدِىْ فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ
মানে, "আমার উম্মাতের পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে আরো কিছু বেশি ফিতনার কিছু রেখে গেলাম না।"
তাও টের পাই তখন শয়তান শিরায়-উপশিরায় লাড়ে চাড়ে। একে ইমোশোনাল ইনটেলিজেন্স বলতে পারেন - নিজের বেসিক ইন্সটিংকট বুঝতে পারা এবং সেটার ব্যাপারে সচেতন থাকা।
অনেক ভাইয়েরা বোনদের, এবং বোনেরা ভাইদের ফেসবুক মেসেনজারে মেসেজ পাঠান। ভালো নিয়তেই পাঠান। ভালো জিনিস পাঠান।
কিন্তু শয়তানের লাড়া-চাড়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে এই মেসেজ পাঠানোর বিষয়টাকে ভালোভাবেই আপনার সামনে আনবে। একজন ভালো মুসলিম বা মুসলিমাকে শয়তান কখনই 'মেয়ে পটানোর' বদবুদ্ধি দেবে না।
সে উৎসাহ দেবে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার।
কিংবা জরুরি মাস-আলা জানার।
এই কারণে শয়তান - শয়তান, লানাতুল্লাহি 'আলাইহি।
বিপরীত লিঙ্গের কাউকে নাসীহা দিয়ে মেসেজ পাঠানোর দরকার নাই।
মেসেনজারে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার দরকার নাই। এই কাজটা আলিমদের জন্য ছেড়ে দেন। ফেসবুকের স্ট্যাটাস কিংবা ইউটিউবের লেকচার আছে যথেষ্ট।
কারো হিদায়াত কপালে থাকে সে লিংক পেয়ে যাবে। আপনার লিংক দেওয়ার দরকার নাই।
দুনিয়াবি বা অন্য কোনো খুব জরুরি প্রয়োজনে পাঠাতে হলে নিজের স্বামী/ ভাই/ বাবা/বোন এ রকম কাউকে অ্যাড করে তারপর মেসেজ দিয়েন।
আমরা যত ভালো হই না কেন, যত ভালো হওয়ার চেষ্টা করি না কেন - দিনশেষে আমরা জৈবিকভাবে মানুষ এবং মানসিকভাবে শয়তানের কুমন্ত্রণার তীরে জর্জরিত। তাই কোনোভাবেই আমরা শয়তানকে কোনো সুযোগ দেব না।
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা আমাদের শয়তানের চক্রান্তগুলো বোঝার এবং সতর্ক হওয়ার সামর্থ্য দান করেন যেন।

No comments:

ads
Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.