ads

ডিপ্রেশন বনাম সবর

 বর্তমান জাহেলী সমাজে ডিপ্রেশন, হতাশা এবং জীবনের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়ার অনেক উপাদান আছে। বেকারত্ব, পারিবারিক কলহ, সামাজিক অনিরাপত্তা, সুদী ঋণের চাপ, হারাম রিলেশনে ব্যর্থতা এর মধ্যে অন্যতম। অধিকন্তু এই বিষয়গুলো ডিপ্রেশনে ভোগা ব্যক্তিটিকে আত্মহত্যার মত জঘন্য কর্মের দিকে ঠেলে দেয়। যেটা আদতে কোন সমাধান নয়। এবং যার অর্থ দাঁড়ায় লোকটি এক নিম্নতম অশান্তি থেকে বাঁচতে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে পা বাড়াচ্ছে।

উপরের কারণগুলো বাহ্যিকতার মূল্য রাখে। বাহ্যিক এই বিষয়গুলো একটা শূন্যতার সুযোগ নিয়ে মানুষের হতাশাকে আরো বৃদ্ধি করে দেয়। সেই শূন্যতাটা হল দ্বীনি চেতনা। একটা মানুষের ভিতর দ্বীনি চেতনা জাগ্রত থাকলে উপরোক্ত বিষয়গুলো তাকে জীবনের ব্যাপারে অসহ্য করে তুলতে পারে না। কারণ দ্বীন তাকে এই অনুভূতি দান করবে যে, তার জীবনের একটা লক্ষ্য আছে এবং তার চূড়ান্ত একটা আশ্রয়স্থল আছে। তার দুঃখ বেদনাকে একান্তে শেয়ার করার একজন পবিত্র সত্ত্বা আছেন। যিনি তার জীবনের জন্য সর্বোত্তম ফায়সালাটি করতে পারবেন। তার জীবনের মালিক সে নয়। এই জীবনের মালিক তার রব, যিনি এই জীবনকে ধ্বংস করতে নিষেধ করেছে। বরং এই জীবনকে আল্লাহর উবুদিয়্যাত তথা দাসত্বের জন্য কাজে লাগাতে নির্দেশ দিয়েছেন। এটাই জীবনের লক্ষ্য।
ইসলাম বিপদ আপদের সময় মানসিক শক্তির জন্য যেই অস্ত্রটি দিয়েছে তার নাম হল "সবর"। বিপদের সময় সবর ধারণ এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এমনকি মহান আল্লাহ তা'য়ালা প্রায় অধিকাংশ নবী রাসূলকেই এই শিক্ষার মধ্য দিয়ে প্রতিপালন করেছেন। " বিপদ যত বড় আল্লাহ এর বদলাও দিবেন তত বড়", "বিপদের সময় যে আল্লাহর প্রতি সবরের সহিত মনোনিবেশ করে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান", "বিপদ স্পর্শ করার পর ধৈর্য্য ধারণ করলে মুমিনের জন্য সেটাও কল্যানকর বস্তুতে পরিণত হয়ে যায়"। এই কথাগুলো রাসূলের হাদীস। প্রতিটি বাক্যের পিছনে প্রশান্তি আর মানসিক শক্তির খাজানা লুকায়িত আছে।
আমরা মুসলিমরা " সবর" জিনিসটাকে আসলে গভীর থেকে অনুভব করতে পারি না। যার দরুণ সবরের অন্তর্নিহিত যেই শক্তি সেটা থেকেও আমাদের বঞ্চিত থাকতে হয়। সবরের মেন্টাল পাওয়ারটাকে আমরা ফীল করতে পারিনা। সবর আসলে কী? সবরের গভীর অর্থটা হল, বান্দা আল্লাহর কাছ থেকে সান্ত্বনা লাভ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি সবর ধারণ করে তাকে স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা সান্ত্বনা দান করেন।" আপনি কল্পনা করুন, আপনার বিপদের সময় আপনার রব আপনাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। এই আবেগের সামনে হতাশা কখনোই টিকে থাকতে পারে না।
একই হাদীসের পরবর্তী অংশে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,"সবর থেকে উত্তম ও মহান নেয়ামত আর নেই।" এটা কোন কথার কথা নয়। আবার এমন কোন ব্যক্তির কথাও নয়, যিনি অনর্থক বাক্য উচ্চারণ করতেন। তার মুখে উচ্চারিত প্রতিটি বাক্যই মানব সমাজের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।
আমি এমন বেশ কিছু মানুষকে দেখেছি যারা কোন কারণে ডিপ্রেশনে ভোগার জায়গা থেকে জাহেলী জীবন ছেড়ে দ্বীনের পথে ফিরে এসেছেন। সেটা হারাম রিলেশনে ব্যর্থ হওয়া হোক কিংবা পারিবারিক কলহ হোক অথবা সামাজিক অনিরাপত্তা। হতাশার সময়টাতে তারা আর কোথাও মানসিক আশ্রয় খুঁজে পায়নি। কিন্তু তারা যখন দ্বীনের কাছে আশ্রয় নিল তখন দেখতে পেল মানসিক শক্তি সঞ্চয়ের উৎকৃষ্ট সব উপাদান এখানে বিদ্যমান। তারা দেখল কুরআন তাদেরকে সান্ত্বনা দিচ্ছে, সালাত তাদের ভিতর প্রশান্তির অনুভূতি তৈরি করছে, চোখের পানি ফেলে দোয়ায় আল্লাহর কাছে বাচ্চাদের মত কান্না করা তাদের হৃদয়ের ভারত্বকে হালকা করে দিচ্ছে। এভাবেই তারা অদৃশ্য এক সত্ত্বার কাছে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে।l
এজন্যই দেখা যায়, আত্মহত্যাকারীদের অধিকাংশই নাস্তিক, দ্বীনহীন, মুলহিদ। আর কিছু কিছু আত্মহত্যাকারী এমন যারা নাস্তিক না হলেও তাদের দ্বীনি চেতনা ও কর্মের সাথে সম্পর্ক খুবই এবং খুবই দুর্বল। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে, নাস্তিকদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সর্বাধিক। প্রতি ১০০০ জনে ২৫ জন নাস্তিক আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে মুসলিমদের মধ্যে এই হার ০.১ জন। এই যিরো ওয়ান মুসলিমদের ভিতরও সেই শ্রেণীর কিছু মুসলিমের নাম থাকবে যারা নামে মুসলিম মাত্র। দ্বীনি চেতনার সাথে যাদের কোন সম্পর্ক নেই বললেই চলে। বিভিন্ন গবেষণা দাবি করছে, যেই রাষ্ট্রগলোতে দ্বীনি বোধ প্রসারিত বেশি সেই রাষ্ট্রগুলোতে আত্মহত্যার হার খুবই কম। এবং দ্বীনদার ব্যক্তিদের ভিতর আত্মহত্যার ঘটনা নেই বললেই চলে।
২০০৪ সালে আমেরিকান জার্নাল অফ সাইকোলজিস্ট- তে প্রকাশিত আরেক গবেষণাও একই কথা বলছে। গবেষণাটির সারসংক্ষেপ হল,
১। নাস্তিকদের ভিতর আত্মহত্যার হার সবচেয়ে অধিক। কারণ তাদের জীবনের কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নেই।
২। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে অবিবাহিত তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বেশি।
৩। অধিক সন্তানের অধিকারীদের হার একদমই কম।
৪। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, দ্বীনি চেতনা মানুষকে দুঃখ- হতাশা কাটিয়ে তুলতে মানসিকভাবে শক্তি সঞ্চয় করে। এজন্য আত্মহত্যার প্রবণতা প্রতিরোধে দ্বীনি চেতনাকেই সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা হিসেবে দাবি করে গবেষণাটির ইতি টানা হয়।


No comments:

ads
Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.