নারী স্বাধীনতার সমাধান কোথায়
জব স্যাটিসফ্যাকশন বলে একটা টার্ম আছে যেটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। একটা মানুষ জব করে কতোটা মানসিকভাবে স্বস্তি বা আনন্দ পাচ্ছে – এটাই জব স্যাটিসফ্যাকশন। জব স্যাটিসফ্যাকশন নিয়ে হাজার হাজার সার্ভে আছে। জব স্যাটিসফ্যাকশনকে মাপার জন্য শয়ে শয়ে প্যারামিটার আছে। যদি কেউ তার জব নিয়ে খুব খুশি থাকে তাহলে আমরা বলি ড্রিম জব। বাস্তবে ড্রিম জব এর সংখ্যা খুব কম। বেশিরভাগ জবই ড্রিম জব না। জব মানেই ‘প্যারা।’ নিজের মুড, মর্জি বা ইচ্ছা মতো কাজ করার সুযোগ নেই। থাকবেই বা কেন? জব মানেই অন্যের কাজ।
যারা জব করে তাদের কম বেশি ‘বস’ বা ‘ম্যানেজার’কে নিয়ে অভিযোগ থাকে। কেউ তার অধীনস্থদের সাথে খুব কর্কশ হয়, বেশি বেশি চাপ দেয়, অল্প দিয়ে অতিরিক্ত খাটায়, অপমানজনক কথাবার্তা বলে। অন্যায়ভাবে পদোন্নতি আটকে রাখে। কাজের পরিবেশ বা কলিগদেরকে নিয়েও মানুষের অসন্তোষ থাকে। পলিটিক্স চলে। পেছনে কথা লাগানো চলে। বুলিং চলে। মেয়েদের ক্ষেত্রে বাজে ইঙ্গিত কিংবা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট পর্যন্ত হয়। আরো কতো কী।
কিন্তু তবু মানুষ কাজ করে। কারণ করতেই হয়। কেউ এ কথা বলে না, ‘চাকরি-বাকরি’র সিস্টেমটা ইনহেরেন্টলি একটা অপ্রেসিভ সিস্টেম, ‘বস’রা কর্মচারীদের ওপর কর্তৃত্ব খাটানোর জন্য চাকরি-বাকরি সিস্টেমটা টিকিয়ে রেখেছে। 'বস'দের আনুগত্য মানিনা। চাকরি না করে যদি সবাই যদি নিজের ঘরের পেছনে গরু-ছাগল লালন-পালন কিংবা উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসায় নেমে পড়তে শুরু করে তাহলে ‘বস’রা কর্মচারীদের সমীহ করতে শিখবে, তাদের প্রাপ্য অধিকার দেবে।
বাস্তবে এসব কথা কেউ বলে না, কারণ এগুলো অযৌক্তিক, অবাস্তব। কিন্তু একই রকম একটা অবাস্তব, অযৌক্তিক একটা ন্যারেটিভে আমরা বিশ্বাস করি। সেটা হচ্ছে, ‘নারীমুক্তির জন্য নারীদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়া জরুরি। তা না হলে সংসারের যাঁতাকলে নারীরা শোষিত হতেই থাকবে।’
ওপরে যে সমস্যাগুলোর কথা বললাম সে সমস্যাগুলো কিছুটা ভিন্নরুপে একটা পরিবারেও থাকে। সংসার মানেই সেখানে কিছু সমস্যা থাকবে। মনের মতো সংসার সবার হয় না। সংসার মানেই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া হবে, মন কষাকষি হবে। ‘কথা শুনতে’ হবে। মানসিক শান্তি সবসময় মিলবে না।
সংসারে সমস্যা আছে, থাকবে। চাকরি-বাকরিতে সমস্যা আছে, থাকবে। মনের মতো সংসার সবার হয় না, ড্রিম জবও সবার মেলে না। কিন্তু প্রগতিশীলদের দাবি, নারীদেরকে সংসারবিমুখী করে চাকরি-বাকরিতে ঢুকিয়ে দিলে সমস্যার সমাধান হবে। এই সমাধানের ভারিক্কি নাম ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট।
সমস্যার সমাধান আসলে হয় না। সমস্যাগুলো ভিন্নরুপে হাজির হয়। কিন্তু ইকোনোমিক এমপাওয়ারমেনেটের সমস্যাগুলোকে ‘মেনে নিতে হয়। কী আর করা। কারণ সেগুলো বাস্তবতা।’ আর সংসারের সমস্যাগুলো হচ্ছে ‘সিস্টেমেটিক অপ্রেশন। এটাকে মেনে নেওয়া যাবে না। জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও।’
এই যে দুটো সমস্যা, কিন্তু একটা সমস্যা হিসেবে মনে করা, আর অন্যটাকে দেখতে না পাওয়া – এটা মানসিক বৈকল্য নয়, এটা বুদ্ধিমত্তার অভাব নয়, এটা মূলত অন্তরের অন্ধত্ব। তারা চোখে দেখে, কানে শোনে, কিন্তু তাদের অন্তরগুলো বোঝে না।
আমি এ আলোচনায় যাবো না কোনটায় আসলেই স্যাটিসফ্যাকশন বেশি - সংসার নাকি জব। সেটা অন্য কারো জন্য আরেকদিনের জন্য তোলা থাকুক।
যেটা বলতে চাচ্ছি তা হলো, মানুষের বানানো যত আদর্শ আর ধর্ম আছে, তার সবক’টায় অন্ধত্বের এই বৈশিষ্ট্যটা কমন। তারা একটা সমস্যার সমাধান হিসেবে একটা কিছু হাজির করে, কিন্তু সে সমাধানের ত্রুটিগুলো তারা দেখে না। তারা সেটাকে সমাধান ‘মনে করে’, কিন্তু সেটা আসলে সমাধান কিনা সেটা নিয়ে নিশ্চিত হবার ভান করে, কিন্তু আদতে তারা নিশ্চিত না। কুরআনের ভাষায় এই ‘অনিশ্চয়তা’র বা ‘অনুমান ভিত্তিক ধারণা’ নাম হচ্ছে ظَنًّ, আল্লাহ তাআলা সূরা ইউনুসের ৩৬ নাম্বার আয়াতে বলেন,
وَ مَا یَتَّبِعُ اَکۡثَرُہُمۡ اِلَّا ظَنًّا ؕ اِنَّ الظَّنَّ لَا یُغۡنِیۡ مِنَ الۡحَقِّ شَیۡئًا ؕ
“আর তাদের অধিকাংশ লোক শুধু ধারণার অনুসরণ করে; নিশ্চয়ই বাস্তব ব্যাপারে ধারণা কোন কাজে আসে না…”
No comments: